লিটন সরকার বাদল, পাঁচ কন্যা সন্তান নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করা বিধবা নারীকে নতুন ঘর বানিয়ে দিয়ে মানবিকতার অসাধারণ দৃষ্টান্তস্থাপন করছেন করোনায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো নাঙ্গলকোট উপজেলার শিক্ষার্থীদের সেচ্ছাসেবী টিম সংশপ্তক। পৌরসভার কেন্দ্রা গ্রামে সিমেন্টের বস্তা দিয়ে কোনভাবে ঘর তৈরী করে জীবনযাপন করছিলেন অসহায় বিধবা নারীটি।একটু বৃষ্টি হলেই আতংকে জীবনযাপন করতো তারা। বিধবা অসহায় মনোয়ারা বেগম জরাজীর্ণ ঝুঁপড়ি ঘরে থেকে অবশেষে বাংলাদেশের স্বাধীন-সার্বভোম জাতীয় পতাকার রংয়ে লাল-সবুজের টিনের ঘর পেয়েছেন। লাল-সবুজের টিনের ঘর এ যেন এক টুকরো বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি জানান দিচ্ছে। লাল-সবুজের ঘরের সাথে উপার্জন করার মতো কেউ না থাকায় তাদের আয়-রোজগারের জন্য বিধবার ছোট মেয়ে জোলেখা আক্তার ঝুমুরকে একটি সেলাই মেশিনও প্রদান করা হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘‘সংশপ্তকের’’ সমন্বয়ক জহিরুল ইসলামের উদ্যোগে দেশের এবং প্রবাসী সু-হৃদদের আর্থিক সহায়তায় বিভিন্ন প্রতিকুলতা মাড়িয়ে লাল-সবুজের টিনের ঘরটি নির্মাণ করা হয়।
ঘরহীন বিধবা ও অসহায় মনোয়ারা বেগমের স্বামী আবু তালেব ওরপে কালা মিয়া গত প্রায় ১৫বছর পূর্বে অসুস্থতায় মারা যান। গত ১৫ বছর থেকে বিধবা মনোয়ারা বেগম ৫ মেয়ে নিয়ে প্রতিবেশীদের সাহায্য সহযোগিতায় খেয়ে না খেয়ে কষ্টে জীবনধারণ করছেন। এর মধ্যে তিন মেয়েকে বিয়ে দেন। বড় মেয়ের স্বামী তাকে পিতার বাড়ি রেখে চলে যায়। বর্তমানে মনোয়ারা বেগম স্বামী পরিত্যাক্তা এক মেয়ে, স্কুল পড়ুয়া এক মেয়েসহ প্রতিবন্ধী এক নাতিকে নিয়ে দীর্ঘ অমানবিক কষ্টভোগের পর ঘর পেয়ে তার মুখে রাজ্যের হাসি ফুটেছে। ঘর নির্মাণে যারা আর্থিক সহযোগিতা করেছেন তাদের জন্য আল্লাহর নিকট দু‘হাত তুলে দোয়া করেন।
গত ২ মে মনোয়ারা বেগমের ভাসুরের ছেলে কলেজ শিক্ষার্থী জাফরুল হায়দার হৃদয় তার ফেস বুকে বিধবা মনোয়ারা বেগম তার সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে পোস্ট দেন। বিষয়টি বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের নজরে আসে।
এছাড়া, নাঙ্গলকোটের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও কলেজ শিক্ষার্থীদের করোনা ভাইরাস বিষয়ে সচেতনতা ও অসহায়দের খাদ্য সহায়তার জন্য গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘‘হ্যালো সংশপ্তক’’ এর সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী জহিরুল ইসলামেরও নজরে আসে। ওই সময় বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের আর্থিক সহায়তায় করোনা ভাইরাসে অসহায়দের খাদ্য সহায়তার অংশ হিসেবে ‘‘সংশপ্তক’’ টিমের সমন্বয়ক জহিরুল ইসলাম বিধবা মনোয়ারা বেগমের জন্য চাল, ডাল, মুরগী, সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা নিয়ে তাদের বাড়িতে হাজির হন। জহিরুল মনোয়ারা বেগমের বাড়ি গিয়ে দেখতে পান, তাদের এক চালা দু‘রুমের সিমেন্টের বস্তা দিয়ে তৈরী ঝুঁপড়ি ঘর। চালার ফুটো দিয়ে ঘরময় পানি পড়ে। বৃষ্টির হাত থেকে ঘর রক্ষায় ঘরের চালায় গাছের ডালপালা, পাতা এবং পলিথিন দেয়া হয়েছে। বৃষ্টির পানি আটকাতে ঘরের ভিতরে বল, বাটি এবং পাতিল বসানো হয়েছে। ঝড় আসলে চরম আতঙ্কে তাদের দিন কাটাতে হয়। ঘরের চতুর্দিকে সিমেন্টের খালি ব্যাগ দিয়ে বেড়া দেয়া হয়েছে।
ঘরের দরজা নেই। এক অমানবিক পরিবেশে তাদের দিন কাটাতে দেখেন। এছাড়া তাদের আয়-রোজগারের মত কেউ নেই। খেয়ে না খেয়ে তাদের জীবন চলছিল। তাদের এই অমানবিক জীবন যাপনের চিত্রটিও বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের নজরে পড়ে। তিনি সংশপ্তক টিম সমন্বয়ক জহিরুল ইসলামকে ঘরের কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেন। পরে জহিরুল ইসলাম তার ফেসবুক আইডি থেকে বিধবা মনোয়ারা বেগমের অমানবিক জীবন-যাপনের চিত্রটি ভিডিও আকারে প্রকাশ করে অসহায় বিধবার ঘর নির্মাণে দেশের এবং প্রবাসের সুহৃদদের নিকট আর্থিক সহায়তা চান।
জহিরুল ইসলামের এই আবেদনে সাড়া দিয়ে দেশের এবং প্রবাসী সুহৃদদের প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তায় বিধবার ঘর নির্মাণ করা হয়। সংশপ্তক টিমের সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম বিধবার ঘর নির্মাণের বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রথম যখন বিধবা অসহায় মহিলার ঘরটি চোখে পড়ে তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়েছে। জরাজীর্ণ একটি কুঁড়ে ঘরে তাদের অবস্থান ছিল। ঝড়-বৃষ্টির সাথে লড়াই করে তাদেরকে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে । পরবর্তীতে হৃদয়বান মানুষের অর্থায়নে ঘরটি নির্মাণ করে দিতে পেরে আমি আনন্দিত। যারা আমার ডাকে সাড়া দিয়ে অর্থ দিয়েছে সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। অন্তত এখন তারা ঝড়-বৃষ্টি থেকে রেহাই পেয়ে শান্তিতে থাকতে পারবে ঘরটিতে।