কুমিল্লাসহ ঢাকার ৮ হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে দেবীদ্বারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজন (৫৩) মারা গেছেন।
গত শুক্রবার (১০ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জে মারা যান তিনি। গত বৃহস্পতিবার তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর। পরীক্ষার তার দেহে করোনা শনাক্ত হয়।তার স্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, কুমিল্লা থেকে ঢাকার ৮ হাসপাতাল ঘুরেও স্বামীর ঠিকমত চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করতে পারলাম না। একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন তিনি।তার মৃত্যুতে দেবীদ্বার উপজেলার নবিয়াবাদ গ্রামের নিজ বাড়িসহ ৮ বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এছাড়াও তার স্ত্রীর বড় বোনজামাই উপজেলার বেগমাবাদ গ্রামের তপন সাহা ও তার সংস্পর্শে আসা দেবীদ্বার পৌর এলাকার অরুণ চন্দ্র দত্তের বাড়িসহ ১০ বাড়ি লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
প্রথমে তার রক্ত ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষায় টাইফয়েট রোগ নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান ‘চান্দিনা দত্ত ডায়াগনেস্টিক সেন্টার’ ও চান্দিনা বাজারে অবস্থিত যে ফার্মেসি থেকে ওষধ ক্রয় করেন সেই ‘জে এম সেন ফার্মেসিও লকডাউন করা হয়েছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, ডা. মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, তাকে জরুরি বিভাগ থেকে ক্যাবিনে ভর্তি হতে বলা হয়। তবে তিনি চলে যান। পরে ওই রোগী করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ আসার সংবাদ পাই। এজন্য এ হাসপাতালে আসার পর তাকে বহনকারী দুজন সহকারীকে হোম কোয়ারেইন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।এদিকে, দেবীদ্বার নিউমার্কেট এলাকায় চিকিৎসা নিতে আসায় আরেকটি প্রাইভেট হাসপাতাল ‘দেবীদ্বার মেডিকেল সেন্টার’কে লকডাউন বা চিকিৎসায় সহযোগী চিকিৎসক ও সেবিকাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে দেয়া হবে কিনা জানতে চাওয়া হয়।
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান জানান,ডাক্তার হাবিবুর রহমান পিপিই পরা অবস্থায় ছিলেন। আর তার লক্ষণ দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নেয়ার কথা বললে চলে যায়। এজন্য তাকে হোম কোয়ারেইন্টাইনে থাকার প্রয়োজন হবে না। তাছাড়া ওই হাসপাতালে যেহেতু চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়নি, সে কারণে হাসপাতাল লকডাউন প্রয়োজন হবে না, তবে সতর্ক থাকতে হবে বলে জানান তিনি। তবে জানা গেছে, ডাক্তারের অপেক্ষায় ওই রোগী হাসপাতালটিতে প্রায় ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন। এ সময়ে অনেকেই সংস্পর্শে আসতে পারেন সেটি বন্ধ করা হবে কিনা জানতে চাইলে ইউএনও জানান, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নবিয়াবাদ গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মীর্জা বাহাদুর জানান, করোনা সন্দেহে হলে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। পরে তাদের হোম কোয়ারাইন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করেন। তাছাড়া তার কর্মস্থল, আত্মীয় স্বজনদেরও সতর্ক করা হয়।এরপর দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নেন ওই ব্যক্তি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। পরে তারা বাড়িতে চলে যান। করোনায় আক্রান্ত ওই ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জে তুলা ও সুতার মালামাল সাপ্লাইয়ের কাজ করতেন। তার বোনের ছেলের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন বলে তার স্ত্রী জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বাড়িতে থাকা অবস্থায় গত ৫ এপ্রিল থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে চান্দিনা দত্ত ডায়াগনেস্টিক সেন্টার তার পরীক্ষা নিরীক্ষায় টাইফয়েড জ্বর বলে ডাক্তার জানিয়েছিলেন। নিহতের স্ত্রী আরও জানান, ওই দিন (৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার) বিকেলে শ্বাসকষ্ট প্রকট হলে নবিয়াবাদ গ্রামের প্রিতম সাহা নামে এক যুবক ৯৯৯ ফোন করে দেন।
পরে অ্যাম্বুলেন্স করে রাত ১০টার দিকে প্রথমে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ওখানে জরুরি বিভাগ তাকে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে যেতে বলে। ওইদিনই রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল নেয়ার পথে কুমিল্লা সিডিপ্যাথ হাসপাতালে নেয়া হয়। তারাও ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পরামর্শ দেন। তাদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স চালক ঢাকা যেতে অপারগতা জানিয়ে নামিয়ে দেন। তারা অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে ঢাকায় রওয়ানা দেন। গেণ্ডারিয়া আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যান, ওখানেও তাকে রাখা হয়নি, তারাও তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
পথিমধ্যে আরো একটি হাসপাতালের আইসিইউতে রাখার চেষ্টা করেন। ওই হাসপাতালেও এক পর্যায়ে তাদের ভর্তি না করিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কোনো চিকিৎসক তাকে দেখতে আসেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পরে হাসপাতালের লোকজন তাদের কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে যেতে বলেন। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রীতে পৌঁছালে রোগীর নমুনা পরীক্ষার পজেটিভ রিপোর্ট না আসায় ফেরত পাঠিয়ে দেন। পরে নারায়ণগঞ্জ এসে মারা যান। এখানেই তার সৎকার করা হয়।