চারপাশে সবুজ লেবু গাছের সমাহার, গন্ধে ম-ম করছে এলাকা। বলছি, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পৌরসভাধীন শুশুন্ডা সর্দার বাড়ির একজন সফল কৃষক মোঃ সুয়া মিয়ার (৬২) কথা। আগে কলা
চাষী হওয়ার সুবাদে বরুড়া উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর আগে খাগড়াছড়িতে ট্রেনিং এ যান মোঃ সুয়া মিয়া।
জানালেন, সেসময় খাগড়াছড়িতে লেবু দেখে নিজের এলাকায় লেবু চাষের স্বপ্ন বুনেন তিনি। যেই চিন্তা সেই কাজ। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথমে নিজের আগ্রহে স্থানীয় নার্সারী থেকে ৫ টি, বরুড়া কৃষি অফিস থেকে ১০টি, নোয়াখালী থেকে ২০টি গাছ ক্রয় করে নিজের বাড়ির আঙ্গিনার ১০ শতাংশ জায়গায় ৩৫টি গাছ লাগান তিনি। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি তাকে।
বরুড়া কৃষি অফিসের সহায়তায় ট্রেনিং এর সুবাদে বিভিন্ন জেলায় যান তিনি। সেখানে কৃষি কর্মকতাদের সহযোগিতায় ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন জাতের চারা ও কলম সংগ্রহ করেন।
নিজের সার্বক্ষনিক পরিচর্যায় ক্রমান্বয়ে এখন প্রায় ৬৮টি শতাংশ জায়গায় ৪টি বাগানে ৪২ প্রজাতির প্রায় ৫০০ লেবু গাছ রয়েছে সুয়া মিঞার। যার মধ্যে সিডলেস লেবু, সাতকড়ি লেবু, এলাচি লেবু, বারি লেবু, জারা লেবু, কট লেবু, বাদামী লেবু, সালাতী লেবু উল্লেখযোগ্য। এদের অধিকাংশই বারো মাসি জাতের লেবু গাছ। সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, লেবু বাগানের পাশাপাশি তিনি ক্ষুদ্র পরিসরে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, জামরুল, নারিকেল, মরিচ, হলুদ, আদা, থানকুনী, ড্রাগন ফল সহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় ফল, মসলা জাতীয় শস্য উৎপাদন করে এগুলো থেকে বার্ষিক ২-৩ লাখ টাকায় আয় করেন যা দ্বারা তার পরিবারের ৫ জনের সংসার চলে।
এই আয় দিয়েই নিজের সন্তানদের লেখা পড়া করাচ্ছেন তিনি। তার বড় ছেলে সিলেট শাহ জালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত, মেঝো ছেলে বরুড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজের ছাত্র।
সুয়া মিয়া আরো জানান, “আমার এই লেবু বাগান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা, কুমিল্লা কৃষি গবেষণা ও বরুড়া কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রায় প্রতি সপ্তাহে তদারকি করে থাকেন এবং সময়ে সময়ে সরকারি বিভিন্ন সহযোগিতাও করে থাকেন।
তিনি জানান, এ লেবু মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায় স্থানীয় প্রবাসীদের মাধ্যমে। এবং কুরিয়ারের মাধ্যমেও পাঠিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভোক্তাদের চাহিদা পূরন করি।
লেবু বাগান করতে কি কি প্রতিবন্ধকতা আছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমার বিদ্যুৎের সমস্যা আছে। একটি বাগানে বিদ্যুৎ থাকলেও অন্য বাগান গুলোতে পানি সেচের জন্য বিদ্যুৎ নেই, অনেক চেষ্টা করেছি। এ ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। সবগুলো বাগানে বিদ্যুৎ পেলে উৎপাদন আরো বাড়াতে পারবো’।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরুড়া কৃষি অফিসের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম মোবাইলে জানান, ‘সুয়া মিয়া একজন আদর্শ কৃষক। এককথায় বলা চলে, উনি অত্যন্ত পরিশ্রমী ও স্পষ্টবাদী মানুষ। উনার একটা গুণ হচ্ছে ট্রেনিং এ বিভিন্ন জেলায় গেলে উনি ওই সব জেলা থেকে নতুন নতুন জাতের লেবু উনি সংগ্রহ করেন ট্রেনিং এ দেয়া সম্মানী গুলো দিয়ে। পরে বিদ্যুৎের সমস্যা নিয়ে আমরা একবার উদ্যোগ নিয়েছি, কিন্তু মাপের সমস্যা দেখিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ উনাকে বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত করেছে। তবে এই করোনা পরিস্থিতি গেলে আমরা আবারও উনার বিদ্যুৎের সমস্যা নিয়ে উদ্যাগ নিবো।’