পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় করোনাভাইরাসকে হারিয়ে এক পরিবারের পাঁচ সদস্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার (০৭ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাদের বাড়ি পাঠানো হয়।
উপজেলার কালাইয়া ইদ্রিস মোল্লা ডিগ্রি কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন তারা। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ায় বৃহস্পতিবার তাদের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। এ সময় করোনাজয়ীদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান চিকিৎসক-নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা।
করোনাজয়ীরা হলেন- উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের পূর্ব কালাইয়া গ্রামের আজিমন বিবি (৮৫), মেয়ে হাওয়া বেগম (৫০), পুত্রবধূ হনুফা বেগম (৪০), নাতি সিদ্দিকুর রহমান (২২) ও নাতনি ফারজানা আক্তার (১৪)।
করোনাজয়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পৃথিবীর মানুষগুলো অনেক স্বার্থপর। করোনায় আক্রান্ত না হলে বিষয়টি বুঝতে পারতাম না, আপন-পর চিনতাম না। আমরা যখন আক্রান্ত হই তখন আমাদের থেকে গ্রামের মানুষগুলো দূরে সরে যায়। এমনকি আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই খোঁজ রাখেননি। আত্মীয়-স্বজনরা পর হয়ে গেল। মনে হলো পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ নেই।
করোনাকে হারিয়ে বাড়ি ফেরা ৮৫ বছরের আজিমন বিবি বলেন, সবকিছু আল্লাহর রহমত। তিনি রোগ দিয়েছেন, তিনিই আবার সুস্থ করে দিয়েছেন। ১৮ দিন পর বাড়ি যাচ্ছি, ভাবিনি জীবিত অবস্থায় আর বাড়ি যেতে পারব। আজ আমাদের বাড়ি ফেরা ঈদের আনন্দের চেয়েও বেশি।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা। তাদের নির্দেশনা মেনে চলেছি। ওষুধ খেয়েছি, গরম-চা খেয়েছি, গরম পানির ভাপ নিয়েছি, গার্গল করেছি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়েছি। পাশাপাশি হাসপাতালে এই ১৮ দিন নাতি-নাতনিকে যৌবনের গল্প শুনিয়ে সময় কাটিয়েছি।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, এক পরিবারের পাঁচজনের নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ এসেছিল। দীর্ঘ চিকিৎসাসেবায় করোনাকে জয় করে সুস্থ হয়েছেন তারা। এর মধ্যে অবাক করা বিষয় হলো ৮৫ বছরের এক বৃদ্ধা করোনাকে হারিয়ে দিয়েছেন। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনিও। এরপরও তাদের আরও ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সচেতন হলেই সবাই করোনার বিরুদ্ধে জয়ী হবেন।
গত ২০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রোগী সেজে উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নে আসেন একই পরিবারের পাঁচ সদস্য। পরে তাদের উপজেলার ইদ্রিস মোল্লা ডিগ্রি কলেজের হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠালে করোনা পজিটিভ আসে। এরপর তাদের ওই খানে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।