সাংবাদিক মোস্তফার নির্যাতন ঘটনা জানতে বিএমএসএফ’র টিম কক্সবাজার যাচ্ছেন

কক্সবাজার

 কক্সবাজার টেকনাফ থানার ওসি, ঠান্ডা মাথার খুনি প্রদীপের সীমাহীন বর্বরতায় স্থানীয় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা এখনো কক্সবাজার কারাগারে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এই ওসি ও তার সহযোগীদের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় প্রদীপ কুমার সীমাহীন আক্রোশে তাকে ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাকে ধরে টেকনাফ থানায় নিয়ে তার উপর অমানুষিক বর্বরতা চালায়। সে সময় তার চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে নির্যাতন করায় বর্তমানে দুটি চোখই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া তার হাত-পা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়। এতেও ক্ষ্যান্ত হননি ওই বর্বর ওসি- ইয়াবা ব্যবসায়ি সাজিয়ে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ওই মামলায় জামিনের ক্ষেত্রেও ওসি প্রদীপ কুমার এ পর্যন্ত নানা প্রভাব ও কুটকৌশল খাটিয়ে বাধার সৃষ্টি করে নির্যাতিত সাংবাদিককে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

নজিরবিহীন নির্মমতার শিকার সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার ঘটনা জানতে বিএমএসএফ এর উদ্যোগে সাংবাদিক, আইনজীবি, সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও মানবাধিকার কর্মি সমন্বয়ে একটি টিম কক্সবাজারে যাচ্ছেন। তারা ঘটনার আদ্যপ্রান্ত তদন্তের পাশাপাশি আইনি সহায়তা প্রদানের যাবতীয় পদক্ষেপ নিবেন। জেলগেটে তার শারীরিক অবস্থার খোজখবর নেয়াসহ উন্নত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার পদক্ষেপও নিবেন তারা।
উল্লেখ্য, চরম অসুস্থ অবস্থায় সাংবাদিক মোস্তফা দীর্ঘ ১১ মাস যাবত কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, পুলিশের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জেরে ‘কক্সবাজার বাণী’ পত্রিকার সম্পাদক সাহসী সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছিলো টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের বিরুদ্ধে। ফরিদুল মোস্তফার গ্রেফতার, তার উপর চালানো নানা বর্বরতা ও প্রভাব খাটিয়ে জজামিনে বাধা সৃষ্টির নানা অপকর্ম চালালেও ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে কেউ সাহস পায়নি। সাবেক মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের পর ওই ওসির বিরুদ্ধে এখন অনেকেই মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন।

সাংবাদিক মোস্তফার স্ত্রী জানিয়েছেন, ক্রসফায়ারের ভয়ে রাতের আধারে কক্সবাজার থেকে পালিয়ে রাজধানীতে আসা ফরিদুল মোস্তফার জীবন আজ বিনা চিকিৎসায় কক্সবাজারের কারাগারে নিস্তেজ প্রায়। স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতাও আজ অসহায়। তার দোষ একটাই পুলিশের দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ লিখতো মোস্তফা। অন্ধ প্রায় চোখ, ডানা হাত ভাংগা, আঙ্গুল থেতলানো মোস্তফা বুঝি আর সাংবাদিকতাও করতে পারবে না।

জানা যায়, সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস। কোনো পরোয়ানা ছাড়াই ঢাকার পল্লবী থেকে তাকে ধরে নিয়ে টেকনাফ থানায় তিন দিন আটকে রেখে চোখে মরিচের গুড়া ছিটিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানকে।

২০১৯ সালে পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফরিদুল মোস্তফার স্ত্রী হাসিনা আক্তার লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তিনি জানান, ‘তার স্বামী বিভিন্ন সময় টেকনাফ থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করেছেন।

ফরিদুল মোস্তফার মেয়ে সুমাইয়া মোস্তফা খান বলেন, ‘তাদের পরিবারের কেউ কোনো মামলার আসামি নয়। কখনো তারা কোনো অনিয়মে জড়াননি। এরপরও পুলিশ ঠান্ডা মাথায় তার বাবাকে মামলা দিয়ে সমাজে তাদের পরিবারটিকে হেয় করেছে’।

এদিকে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএমএসএফ’র সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর বলেন, সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা আইয়ামে জাহিলিয়াতের নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে। কোন সভ্য মানুষ কিংবা পুলিশের দ্বারা চোখে মরিচের গুড়া দিয়ে বেয়োনেট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় খুচিয়ে এমনকি গোপনাঙ্গেও আঘাত করা হয়েছিল। এ ঘটনার প্রকৃত কারন জানতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে শীঘ্রই একটি টিম কক্সবাজারে যাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.