শাহীন সুলতানা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের আলীনগর ও নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের আওয়ালীকান্দা গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের উদ্যোগে দুই ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের উপর আওয়ালীকান্দা বড় বাড়ির খেয়া ঘাটে নিজেদের উদ্যোগে প্রায় ৫'শ ফুট লম্বা একটি বিশাল বাঁশের সাঁকো তৈরি করে জনদূর্ভোগ কিছুটা লাগব করেছে।
সারোয়ার জেকি নামে এক যুবক কর্তৃক জানা যায়, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে সালুয়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ডুমরাকান্দা বাজার। বাজারটির পশ্চিম দক্ষিণ পাশেই নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের আওয়ালীকান্দা গ্রাম। গ্রামটির পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া সেই পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদ।
অন্যদিকে ডুমরাকান্দা বাজার থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে ফরিদপুর ইউনিয়নের অন্তরগত আলীনগর গ্রাম। এই গ্রামের পশ্চিম পাশে ওই ব্রহ্মপুত্র নদ। নদটি পার হলেই বেলাব উপজেলার আওয়ালীকান্দা গ্রাম।
আর সেই আওয়ালীকান্দা গ্রামেই রয়েছে বড় বাড়ির খেয়া ঘাট নামে পরিচিত খেয়া ঘাটটি। এই ঘাটটি-ই আলিনগর ও আওয়ালীকান্দাসহ আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষ এপার-ওপারে যোগাযোগ করার একমাত্র রাস্তা।
এই খেয়া ঘাটের রাস্তাটি দিয়ে চলাফেরা করার জন্য ব্রহ্মপুত্র নদের উপর কোনো ব্রিজ না থাকায় আলীনগর ও আওয়ালীকান্দা সহ আরও বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ ছিলেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
এছাড়াও এই গ্রামগুলোর কৃষকেরা তাদের এপার-ওপারে উৎপাদিত কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া করতে পারতো না। অনেক সময় ডেলিভারির মতো জরুরি রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া যেত না। স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিনিয়ত নদটি পারাপারে দূর্ভোগ পোহাতে হতো।
যার ফলে গ্রামবাসীর অসুবিধা, জরুরি রোগী আনা-নেয়া ও স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবের জন্য ওই খেয়া ঘাটে ব্রিজ নির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় আওয়ালীকান্দা গ্রামের মানুষ মিলিত হয়ে ঠিক করেন তারা নিজ উদ্যোগেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে।
অবশেষে গ্রামের কিছু যুবক একত্রিত হয়ে ঠিক করেন তাদের একজন নেতা। আর ওই নেতার নাম হলো আকিব আল হাসান।
পরে আকিব আল হাসানকে দায়িত্ব দেয়া হয় তাদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের জন্য কিছু একটা করতে। আকিব আল হাসান হলেন আওয়ালীকান্দা গ্রামের “আওয়ালীকান্দা উদয়ন সংঘ” নামের একটি সামাজিক সংগঠনের সভাপতি।
গ্রামবাসীর দেওয়া দায়িত্ব পেয়ে আকিব আল হাসান গ্রামের উঠতি বয়সী যুবকদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ালীকান্দা ও আলীনগর গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে একটি করে বাঁশ ও যার যা দেওয়ার সাধ্য আছে সেই মতো সাহায্য তুলে নিজেদের উদ্যোগে শুরু করেন এই বাঁশের সাঁকোটি তৈরির কাজ। দীর্ঘ দু’মাস কাজ করার পর অবশেষে সম্প্রতি ৫'শ ফুট লম্বা এই বাঁশের সাঁকোটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়।