নোভেল করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় চীনের অবরুদ্ধ নগরী উহান থেকে তিন শতাধিক বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনা হচ্ছে। একটি বিশেষ বিমানে দেশের পথে রওনা দিয়েছেন তারা। জানা গেছে, বিশেষ ওই বিমানে মোট ৩১৪ জন যাত্রী আছেন।
উহানের তিয়ানহি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোর পৌনে ৬টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৮টা) তাদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। ফ্লাইটটির দুপুর ১২টা নাগাদ দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এর আগে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) দিবাগত রাত তিনটায় ও আজ সকাল ৯টায় বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা থাকলেও চীন বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিংসহ নানা আনুষ্ঠানিকতার কারণে বিলম্ব হয়।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্তব্যরত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জাগো নিউজকে জানান, সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে ওহান থেকে বিশেষ বিমানটি ৩১৪ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নিয়ে রওনা হয়েছে। বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে বিমানটির শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ৩১৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক ফিরে আসার ছাড়পত্র পেলেও শেষ মুহূর্তে দুজন যাত্রীর গায়ে জ্বর থাকায় তাদেরকে অফলোড করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদের কাছে ফ্লাইট বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি সঠিক কারণ জানতে পারেনি বলে জানান। বেলা ১১ টা ৫০ মিনিটে ৩১৪ জন যাত্রী নিয়ে বিমানটি ফিরছে-এমন তথ্য শুনেছেন বলে মন্তব্য করেন।
করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরির সঙ্গে যুক্ত আছেন গবেষক ড. রেজা সুলতানুজ্জামান। তিনি জানান, উহানের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮টি থেকে ৩১৪ জন দেশের পথে রওনা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও আছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাদিশ শিক্ষার্থীদের শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর থেকেই বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। চীনের স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ৯টায় তিয়ানহি বিমানবন্দরে পৌঁছায় বিমানের ওই উড়োজাহাজ।
এর আগে শুক্রবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন, ১৯টি পরিবার, ১৮ শিশু এবং দুই বছরের কম বয়সী দুই শিশুসহ ৩৬১ জন চীন থেকে দেশে ফিরতে নিবন্ধন করেছেন।
এদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্কে চীন থেকে ফেরত আসা সকল যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জানা গেছে, বিমানবন্দরে পৌছার পর সেখান থেকে তাদেরকে রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনা হজ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবার জন্য রাত জেগে অপেক্ষায় ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
চীন থেকে ফেরত আসা যাত্রীদের মধ্যে কারো ১০০ বা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপর জ্বর থাকলে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে। আর যাদের জ্বর বা অন্য কোনো উপসর্গ থাকবে না তাদেরকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হবে।
আশকোনা হজ ক্যাম্পে পুরুষদের জন্য ৫টি ওয়ার্ড ও নারীদের জন্য ১টি ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যারা সম্পূর্ণ সুস্থ তাদেরকে এ ৬টি ওয়ার্ডে রাখা হবে। এছাড়া যারা সামান্য জ্বর বা অন্যান্য অসুস্থতায় ভুগছেন তাদের জন্য একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ বিমানে যাত্রীদের নিয়ে আসতে তিনজন চিকিৎসকও চীন গিয়েছিলেন।
https://www.facebook.com/ShahriarAlamMp/posts/1234233680102150