সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)

ইসলাম

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। প্রিয় নবী (সা.)-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বলে শেষ করা যাবে না। হাজার হাজার বছর ধরে যাঁদের অবদানে আলোকিত আমাদের এ পৃথিবী, তাঁদের শিক্ষা ও সংস্কার নিয়ে মাইকেল এইচ হার্টের অবিস্মরণীয় সংকলন—

‘দ্য হানড্রেড’ গ্রন্থে শত মনীষীর তালিকার ‘এক নম্বর’ ব্যক্তিত্ব হলেন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। এটি তাঁর মর্যাদাকে করেছে চিরভাস্বর। সম্প্রতি পনেরো শ বছরের পুরনো একটি বাইবেল আবিষ্কৃত হয়েছে। তুরস্কে সংরক্ষিত এ সংকলনের একটি পৃষ্ঠার ফটোকপির দাম ১৫ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড বলে মনে করা হচ্ছে। আর এক কোটি ৪০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড মূল্যের এ বাইবেলে স্বর্ণাক্ষরে হজরত ইসা (আ.)-এর নিজ ভাষা তথা ‘আরামি’য় বা ‘সুরিয়ানি’ (হিব্রু) ভাষায় লিখিত হয়েছে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী! অন্যদিকে তাঁর জন্মের আবাহনে জাতীয় কবির নিবেদন—সাহারাতে ফুটল রে ফুল রঙিন গুলে লালা/সেই ফুলেরই খোশবুতে আজ দুনিয়া মাতোয়ারা/সে ফুল নিয়ে কাড়াকাড়ি চাঁদ-সুরুজ গ্রহ-তারা/ঝুঁকে পড়ে চুমে সে ফুল নীল গগন নিরালা।’ অনাচার, অসভ্য, অসত্যের নিকষ অন্ধকারের অবসান ঘটিয়ে প্রিয় নবী (সা.)-এর আবির্ভাব হলো মহাসত্যের চিরন্তন জ্যোতিষ্কের উদয়। তাঁর জন্মলগ্নে হাজার বছর ধরে প্রজ্বলিত পারস্যের অগ্নিকুণ্ড নিভে যায়। রোম সম্রাটের প্রাসাদে ফাটল ধরে এবং ১২টি চূড়া ধসে পড়ে।

কাবাঘরের প্রতিমাগুলো কেঁপে ওঠে এবং একটি সাগর শুকিয়ে যায়, যা ছিল নরবলির কেন্দ্রস্থল। এ সময় প্রকৃতি ছিল তাঁর আগমন প্রত্যাশায় অধীর। ‘রবিউল আউয়াল’ অর্থ বসন্তের প্রারম্ভ। তাই মরুর ঊষর-ধূসর প্রান্তরে নবীর আগমন প্রতীক্ষায় প্রকৃতি সেজেছিল মায়াবী রূপসজ্জায়। গাছে গাছে সবুজের সমারোহ, ম ম গন্ধে খেজুরের ছড়াগুলো উঁকি দিচ্ছে আর পাখপাখালির কূজন, নদীর কলতান ও বাতাসের উদাসী গুঞ্জরণ শোনায় বিশ্বনবীর আগমন বার্তা—‘তোরা দেখে যা, আমেনা মায়ের কোলে/মধু পূর্ণিমারই সেথা চাঁদ দোলে/যেন ঊষার কোলে রাঙা রবি দোলে…।’ এতেই বোঝা যায়, ‘নবীপ্রেম’ একজন মুসলমানের ইমানি অঙ্গীকার। প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি সম্মান জানানো ছাড়া, তাঁর মর্যাদায় বিশ্বাস করা ছাড়া নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দেওয়ার কোনো অধিকার কারো নেই। ইহ-পারলৌকিক মুক্তি ও সাফল্যের জন্য তাঁর আদর্শ অনুসরণ অপরিহার্য। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ইমানদার তাদের জন্য রাসুল (সা.) রহমতবিশেষ, আর যারা আল্লাহর রাসুলের প্রতি কুত্সা রটনা করে, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আজাব।’

(তাওবা : ৬১) তাই তো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভক্তিময় উচ্চারণ—‘মুহাম্মদ নাম যতই জপি ততই মধুর লাগে/নামে এত মধু থাকে কে জানিত আগে।’ প্রিয় নবী (সা.) সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহামানব। তাঁর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব ব্যাখ্যার কোনো প্রয়োজন নেই। কেননা, স্বয়ং আল্লাহ বলেন, ‘ওয়ারা ফানা লাকা জিকরাক’—অর্থাত্ আমি আপনার আলোচনাকে সর্বোচ্চে স্থান দিয়েছি। (ইনশিরাহ : ৪) তাই তো বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের নামের সূচনায় যুক্ত তাঁর (সা.) নাম। ‘উম্মতে মুহাম্মদি’ সগৌরবে নিজের নামের সঙ্গে ‘মুহাম্মদ’ যুক্ত করে রাসুলের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে। পবিত্র কোরআনে প্রিয় নবী (সা.)-এর মর্যাদা ঘোষণা করে একটি সুরার নামকরণ করা হয়েছে ‘মুহাম্মদ’।

আল কোরআনে ‘মুহাম্মদ’ শব্দটি চারবার, ‘আহমদ’ শব্দটি একবার উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ২৯টি গুণবাচক নামের বর্ণনা করে ২২৪ বার তাঁকে নিয়ে আলোচনা রয়েছে। মহানবী (সা.)-এর প্রশংসায় পবিত্র কোরআন বলছে : ‘ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামিন’—অর্থাত্ আমি তো আপনাকে বিশ্বের রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। (আম্বিয়া : ১০৭) শুধু তা-ই নয়, মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি সর্বোত্তম চারিত্রিক গুণে গুণান্বিত।’ (কলম : ০৪) প্রিয় নবী (সা.)-এর গুণ ও মর্যাদা বলে শেষ করার নয়। তাঁকে সম্মান জানানো সবার কর্তব্য। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি সালাত (রহমত, সালাম, দোয়া) বর্ষণ করেন। হে মুমিনগণ, তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করো।’ (আহজাব : ৫৬) প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা উচ্চ মর্যাদার আমল এবং তা ত্যাগ করা অন্যায়।

প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন।’ (তিরমিজি) প্রিয় নবী (সা.)-এর মর্যাদা ও সম্মান অতুলনীয়। বিশিষ্ট সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ সব নবী-রাসুল ও ফেরেশতার ওপর মুহাম্মদ (সা.)-কে মর্যাদা দান করেছেন।’ (মেশকাত) শুধু তা-ই নয়, ভক্তিবাদীদের কাছে তাঁর (সা.) সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। এ প্রসঙ্গে হজরত জাবের বিন সামুরা (রা.) বলেন, ‘একদা আমি চাঁদনি রাতে নবী (সা.)-কে দেখলাম। অতঃপর একবার রাসুল (সা.)-এর দিকে তাকালাম আর একবার চাঁদের দিকে…আমার কাছে তাঁকে চাঁদের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল-চমত্কার মনে হলো।’ (তিরমিজি-দারেমি) প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ইমানের পূর্ণতার পূর্বশর্ত। কেননা প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকৃত ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি ভালোবাসার দিক থেকে তার পিতা-মাতা ও সন্তানসন্ততি অপেক্ষা অধিক প্রিয় (বিবেচ্য) না হব।’ (বুখারি-মুসলিম) প্রিয় নবী (সা.)-এর জীবন ও কর্মের প্রশংসা তাঁর মর্যাদাকে বাড়িয়ে দেয় বহু গুণ। ভক্তিময়তা ও ইমানের দাবিতেই নয়, সত্যের স্বীকৃতিতে অমুসলিম মনীষীরাও একমত হয়েছেন প্রিয় নবী (সা.)-এর উচ্চ মর্যাদা ঘোষণায়।

ঐতিহাসিক গিবন বলেন, ‘তিনি বৈরাগ্যের কঠোরতা ও সন্ন্যাসীর কৃচ্ছ্রতা ছেড়ে অনায়াসে আরব সৈনিকদের মতো অল্প আহার গ্রহণ করতেন… জগতের সুদীর্ঘ ইতিহাসে তাঁর দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত নেই।’ বস ওয়ার্থ স্মিথ বলেন, ‘ক্ষমতার উপকরণ ও আশ্রয় ছাড়া তিনি সর্বাধিক ক্ষমতায় ক্ষমতাসীন ছিলেন।’ স্যার টমাস কারলাইল বলেন, ‘এই পুরুষবর মুহাম্মদ, যেন একটি, মাত্র একটি অগ্নস্ফুিলিঙ্গ অনুমানের অযোগ্য তমসাচ্ছন্ন বালুকাস্তূপে পতিত হলো। কিন্তু দেখো, এই বালির রাশি বিস্ফোরক বারুদে পরিণত হয়ে দিল্লি থেকে গ্রানাডা পর্যন্ত আকাশ প্রদীপ্ত করল।’

স্বামী বিবেকানন্দ বলেন, “তাঁর বাণী ছিল ‘সাম্য’… সেই কার্যে পরিণত সাম্যই জয়যুক্ত হইল…।”সূত্র: Gnews71

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.