আরও শক্তিশালী হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অবস্থান করছে ‘ফণী’।মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড় ফণী প্রবল শক্তি ওড়িশা উপকূলে পৌঁছাতে পারে ৩ মে। এ সময় ঝড়ো বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০-১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বয়ে যেতে পারে।
এদিকে সুপার সাইক্লোনে রূপ নেয়া ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে ফণী মোকাবেলায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভা হয়েছে। তাছাড়া দুর্যোগ মোকাবেলায় সব সংস্থাকে প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে।
প্রস্তুতির একেবারে গোড়াতেই ছুটি বাতিল করা হয়েছে ত্রাণ কাজে জড়িত সব সরকারি কর্মকর্তাদের। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি জাহাজগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, জেলার উপকূলীয় উপজেলাসহ সব উপজেলার ইউএনওকে আশ্রয় কেন্দ্র, শুকনো খাবার, স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণী আগামী শনিবার (৪ মে) আঘাত হানতে পারে বাংলাদেশে। আর ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে যে পথে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানবে। এরপর খানিকটা দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরা উপকূল দিয়ে প্রবেশ করে রংপুর-দিনাজপুরের দিকে আঘাত হানতে পারে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের চারটি নদীবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বুধবার (১ মে) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় প্রস্তুতি সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। এসময় তিনি বলেন, এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, প্রবল শক্তি সঞ্চয়কারী ফণী ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ১ হাজার ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
গত রোববার (২৮ এপ্রিল) ফণীর অবস্থান ছিল বাংলাদেশ থেকে দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরে। সোমবার ছিল ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম থেকে ১,০৯০ কিলোমিটার এবং চেন্নাইয়ের দক্ষিণ-পূর্ব থেকে ৮৮০ কিলোমিটার দূরে।
বলা হচ্ছে ফণীর প্রভাবে দক্ষিণ ভারত, ওডিশা ও বাংলাদেশে ব্যাপক বৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশের তরফেই ঘূর্ণিঝড়টির নাম দেয়া হয়েছে ‘ফণী’। ‘এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’-এ পরিণত হচ্ছে ঝড়টি। ১৮৫ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
ফণী যত এগিয়ে আসছে ততই উত্তাল হচ্ছে সমুদ্র।