স্টাফ রিপোর্টার শহীদুজ্জামান রনিঃ করোনার জন্য মাদরাসা বন্দ তাই সবাই বড় হুজুরের কাছে মোসাফাহ করে বিদায় নিচ্ছে। সবার চোখে পানি, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ ছুটি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা, যাবে বাবা-মার কাছে, আর যাইহোক মরণ যদি আসেও তবুও পিতা-মাতার সঙ্গেই আল্লাহর দেয়া অমিও শাহাদাতের কোলে ঢলে পরতে পারবে।
একে একে সবাই চলে গেল, পুরো মাদ্রাসা খালি। অন্য সময় মহব্বতের চোখে দেখে এমন ওস্তাদগণও তার প্রিয় ছাত্রটির কথা ভুলে গেল। ভুলে গেলো তার দিকে তাকিয়ে আছে কোন এক এতিম ছেলে।
পরিচালক সাহেব ঘরের দরজা লাগাতে গিয়ে দেখলেন একটি ছেলে তার বিছানাপত্র গুছিয়ে প্রিয় সুটকেসের উপরে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। তাকিয়ে আছে দরজার দিকে। কেউ কি আসবে তাকে নেওয়ার জন্য!
পরিচালক সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার তুমি এখনো বসে আছো কেন? তোমাকে কি কেউ বাড়ি যেতে নিষেধ করেছে?
জবাবে ছেলেটি শুধু চোখের পানি ছেড়ে দেয়। কপালে চিন্তার ভাঁজ, চোখে বেদনার অশ্রু, শুধু ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
পরিচালক সাহেব আস্তে আস্তে বাচ্চাটির কাছে গিয়ে বসেন। জিজ্ঞাসা করেন, তোমার কি বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে না?
বাচ্চাটি পরিচালক সাহেবের আদর পেয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকে, আমার আব্বু আম্মু কেউ বেঁচে নেই। মামা আমাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে গিয়েছে, তিনি চাইতেন আমি যেন তার বাড়িতে না থাকি। সেজন্যই তিনি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে আর কোনদিন আসেনি। আমি এখন কার কাছে যাব? কে আমাকে নিয়ে যাবে?করোনা ভাইরাস এর কারনে আমাকে তো মাদ্রাসায় থাকতেও দেবেন না। তাহলে এখন আমি কোথায় যাব?
পরিচালক সাহেব কেঁদে ফেললেন, বললেন চিন্তা করো না, আমিই তোমাকে দেখাশোনা করব। তোমার দেখাশোনা দায়ভার আমার। তোমাকে একটা বিষয় অনুরোধ করি, তুমি কোনদিনও আল্লাহর দরবারে আমার বিরুদ্ধে বিচার দাখিল করিও না। তোমার খোঁজখবর রাখতে পারিনি এজন্য তুমি আল্লাহর দরবারে অভিযোগ দায়ের করিও না। কথা দিচ্ছি, আজ থেকে তোমার সমস্ত দায়-দায়িত্ব আমি কাধে তুলে নিলাম।
ঘরের দরজা-জানালা লাগাও, চলো আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে। আমার এখন পাঁচ সন্তান।
ছেলেটি পরিচালকের আনন্দময় কিছু কথায় হাসতে হাসতে পরিচালকের হাত ধরে নতুন পিতার গন্তব্যের দিকে চলতে শুরু করল।
এই সমাজের বহু মাদরাসার পরিচালক এভাবেই অনেক সন্তানের পিতা হয়ে থাকে। আমরা তাদের কষ্টগুলো বুঝিনা। শুধুই মনে করি, পরিচালক সাহেব সব তাসাররুফ করছে।
আল্লাহ সবাইকে এতিমদের খোজ খবর নেওয়ার তৌফিক দান করুন।