প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ১১:৫৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ১১, ২০২৪, ৬:৫৪ পি.এম
আপত্তিকর আড্ডায় মেতে উঠেছে মেঘনার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর এ মেরুদণ্ডকে পুঁজি করে শিক্ষার মানদণ্ড নষ্ট করার লক্ষ্যে পথেঘাটে হাত ধরে ঘোরাঘুরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। বসছে ঘনিষ্ঠভাবে, একে অপরকে জড়িয়েও ধরছে প্রকাশ্যে। কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে এমন আড্ডার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। দিনের পর দিন স্কুল-কলেজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ক্লাসে অনুপস্থিত থাকছে অনেকে। আবার কেউ কেউ ক্লাস ফাঁকি দিয়েও এমনটা করছে। অভিভাবকদের অজান্তে বিভিন্ন মহল কিংবা রেস্টুরেন্টে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে আড্ডায় মত্ত থাকছে। শিক্ষার্থীরা একই ক্লাসের বন্ধু-বান্ধবীকে নিয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে গিয়ে একান্ত সময় কাটানোর পর ফিরে যাচ্ছে বাড়িতে। অভিভাবকরা কোনোভাবেই বুঝতে পারছেনা তাদের ছেলে-মেয়েদের এমন কর্মকাণ্ড। উঠতি বয়সি শিক্ষার্থীদের এমন আচরণকে দৃষ্টিকটু হিসেবে দেখার পাশাপাশি বিব্রতও হচ্ছেন স্থানীয়রা।
বেশ কিছুদিন পূর্বে উপজেলার মানিকারচর বাজারে অবস্থিত ‘মা রেষ্টুরেন্ট, বিসমিল্লাহ রেষ্টুরেন্ট ও লাভ বার্ড রেষ্টুরেন্টে প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের আনাগোনাসহ ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কয়েকজনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা গেছে। ইতিমধ্যে এ আপত্তিকর কয়েকটি ভিডিও গোপন সূত্রের মাধ্যমে আমাদের এই প্রতিনিধির হাতে এসেছে।
স্থানীয়রা জানান, এই সমস্ত রেষ্টুরেন্ট গুলোতে বেশির ভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যায়। ইউনিফর্ম পরা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের রেষ্টুরেন্টে গিয়ে আপত্তিকর আড্ডায় চরম বিব্রত বলেও জানান তারা। শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরেই সকাল থেকে ভরদুপুরে বাজারে ঘুরাঘুরি করতে দেখা যায়। আবার কেউ কেউ ঘুরাঘুরি করতে গিয়ে তারা জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে। প্রকাশ্যে ধূমপানও করছে নানা বয়সি মানুষের সম্মুখে। তারা আরও জানান- আমাদের ছেলে-মেয়ে কোথায় যাচ্ছে, স্কুল-কলেজে নিয়মিত আসছে কিনা এবং ক্লাস করছে কিনা এটা দেখা আমাদের যেমন দায়িত্ব তেমনি স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব। কর্তৃপক্ষ যদি বিষয়গুলো তদারকি করে তাহলে উঠতি বয়সী শিক্ষার্থীরা বাইরে যেতে পারবে না বলে জানান তারা।
মেঘনা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুর রহমান বলেন, আমি প্রায় ১৫ দিন হলো এই উপজেলায় আসছি। যদি পুরাতন হতাম তাহলে এর দায়ভার আমিও নিতাম। তবে এর জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা অবশ্যই দায়ী। তাদের কারণেই আজ শিক্ষার্থীরা আপত্তিকর আড্ডায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমি এই শিক্ষার্থীদের অপকর্মের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমি এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সেই সাথে পড়াশোনার মানোন্নয়নে আপনাদের তথা মেঘনাবাসির সহযোগিতা কামনা করছি।
মেঘনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা নজরদারি রাখব যেন শিক্ষার্থীরা ক্লাস ছেড়ে কোনোভাবেই রেষ্টুরেন্ট বা নির্জন কোনো স্থানে আড্ডা দিতে না পারে। আর রেষ্টুরেন্ট গুলোকে সতর্ক করে দিয়ে আসবো যেন ভবিষ্যতে ক্লাস চলাকালীন সময়ে ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় রেষ্টুরেন্টে তাদের ঢুকতে না দেওয়া হয়। যদি পরবর্তীতে একই অভিযোগ আমাদের নিকট আসে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।
মেঘনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাস আমাদের এই প্রতিনিধিকে বলেন, এখন স্কুল কলেজ বন্ধ। ঈদের পরে খুললে এ অবক্ষয়টি দূর করার জন্য আমরা একটা অভিভাবক সমাবেশ ডাকবো।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম তাজ কালের প্রতিচ্ছবিকে বলেন, এই সমস্ত অপরাধের তথ্য প্রমাণাদি আমার কাছে দিন। আমি যেভাবে পারি এর সমাধান দেবো। এমনকি ক্লাস চলাকালীন সময়ে রেষ্টুরেন্ট তো দূরের কথা বাজারেও যেন ঢুকতে না পারে বাজারের আশপাশের প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কঠোর ভাবে নির্দেশ দিয়ে আসবো।
dainikajkermeghna.com