Sunday, December 22, 2024

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণ

ভ্রমণ
নীলপানির দ্বীপ খ্যাত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ (Andaman Islands) যেন দিগন্তজোড়া জলরাশির উপর তুলোর মত ভাসতে থাকা সবুজ পাহাড়ের স্থলভূমি। রুপালি বালুকাবেলা আর নীলজলের এই দ্বীপপুঞ্জ একসময় ব্রিটিশদের কাছে কালাপানি নামে পরিচিত ছিলো। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ৫৭২ টি ছোট বড় দ্বীপ নিয়ে আন্দামান ও নিকোবর আইল্যান্ড গঠিত হয়েছে।

উত্তর দিকের কিছু দ্বীপ নিয়ে গঠন করা হয়েছে আন্দামান এবং এই অংশের রাজধানীর নাম পোর্ট ব্লেয়ার। আর দক্ষিণ দিকের দ্বীপ নিয়ে গঠন করা হয়েছে নিকোবর, নিকোবরের রাজধানীর নাম কার নিকোবর। আন্দামান এবং নিকোবর আইল্যান্ডের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি আন্দামানের রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারে অবস্থিত। ছোট্ট, ছিমছাম এবং সুন্দর এই বিমানবন্দরের নাম বীর সাভারকার বিমানবন্দর।

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে যা দেখবেন

উন্মুক্ত সাগরে রঙিন মাছ, প্রবাল ওয়াটার স্পোর্টস ছাড়াও মনোরঞ্জনের জন্য আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আছে ভারতের একমাত্র জীবন্ত আগ্নেয়গিরি ব্যারেন আইল্যান্ড এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত সেলুলার জেল ও ভাইপার দ্বীপ। ভাইপার দ্বীপে ১৪ তলার একটি লাইটহাউস রয়েছে। লাইটহাউসের উপর থেকে অপার সুন্দর প্রকৃতির দৃশ্য উপভোগ করা যায়। পাশাপাশি ঘুরে দেখতে পারেন দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী শহর পোর্ট ব্লেয়ার। চারদিকে সমুদ্র ও পাহাড়ের বেষ্টনীতে গড়ে উঠেছে এই সুন্দর ও গোছানো শহর।

ঘুরে আসতে পারেন আন্দামানের অপরূপ রস আইল্যান্ড থেকে যা একসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এবং উন্নত জীবন যাপনের সুযোগ-সুবিধার জন্য প্যারিস অব ইস্ট নামে পরিচিত ছিল।

হ্যাভলক আইল্যান্ডে অবস্থিত রাধানগর সৈকত টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে এশিয়ার সেরা সমুদ্র সৈকত হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। এখানে আছে নীল জল, সাদা বালি, ঘন বন এবং নীল আকাশের স্বপ্নীল সাগর সৈকত। পোর্ট ব্লেয়ারের ফেনিক্স-বে জেটি থেকে প্রতিদিন ৩টি জাহাজ হ্যাভলকের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন: ০৩১৯২-২৩১৭৯৪।

আন্দামানের নীল আইল্যান্ড জীবন্ত প্রবালের জন্য বিখ্যাত। ছোট এই দ্বীপটির জনসংখ্যা খুবই কম তাই পর্যটকেরা সাচ্ছন্দে প্রবাল আর রঙিন মাছের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারে। প্রতিদিন দুপুর ৩টায় হ্যাভলক থেকে নীল আইল্যান্ডগামী জাহাজ ছেড়ে যায়।

ডলফিন দেখার জন্য লং আইল্যান্ড পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় স্থান। আর নর্থ বে আইল্যান্ডে রয়েছে স্কুবা ডাইভিং এবং নানা রকম ওয়াটার স্পোর্টের ব্যবস্থা। এছাড়া হাতে সময় থাকলে জীববৈচিত্র এবং সমুদ্রস্নানের জন্য প্রসিদ্ধ কচল আইল্যান্ড থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণের সময় ও অনুমতি

নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণের আদর্শ সময়। আন্দামানে প্রবেশের জন্য সকল বিদেশী পর্যটকদের বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। খুব সহজেই আন্দামান এয়ারপোর্ট বা সী-পোর্টে এই অনুমতি নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে সাধারণ পর্যটকদের জন্য নিকোবর ভ্রমণের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

কিভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে বিমানে চড়ে আন্দামান দ্বীপে পৌঁছতে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। সমুদ্রপথে অর্থাৎ জাহাজে করে আন্দামান যেতে ৪ দিন সময় লাগে। কলকাতা ছাড়াও বিশাখাপত্তন এবং চেন্নাই থেকে জাহাজে করে আন্দামান যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। চেন্নাই এবং কলকাতা হতে প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ বার পোর্ট ব্লেয়ারগামী জাহাজ যাত্রা করে। আর বিশাখাপত্তনম থেকে মাসে একটি জাহাজ চলাচল করে। তাই এখান থেকে যেতে চাইলে এক মাস আগে থেকেই টিকিট সংগ্রহ করতে হয়।

শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের অফিসের ঠিকানা ও ফোন নম্বর:
কলকাতা অফিস: শিপিং হাউস, ১৩ স্ট্র্যান্ড রোড, কলকাতা-৭০০০০১, ফোন: ০৩৩-২২৪৮২৩৫৪, ২২৪৮৮০১৩।
চেন্নাই-অফিস: জওহর বিল্ডিং, রাজাজী সান্দাই, চেন্নাই-৬০০০০১, ফোন: ০৪৪-২৫২৩১৪০১।
মুম্বাই অফিস: এপিকে হাউস, পঞ্চম তল, ডিনসা ওয়াচা রোড, মুম্বাই-৪০০০২০, ফোন: ০২২-২২৮২২১০১, ২২৮২৩৩১৬।
পোর্টব্লেয়ার অফিস: আবেরদিন বাজার, পোর্ট-ব্লেয়ার-৭৪৪১০১, ফোন: ০৩১৯২-২৩৩৫৯০/২৩৩৯১৬।

কোথায় থাকবেন

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে রাত্রিযাপনের জন্য বিভিন্ন মানের অসংখ্য হোটেল, গেস্ট হাউস এবং কটেজ রয়েছে। তবে অনেক বাজেট হোটেলে পর্যটকদের রাখতে চায় না। এখানে বাজেট হোটেলে থাকতে হলে ৫০০ থেকে ৭০০ রুপি খরচ করতে হবে।

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণের অন্যান্য প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য

  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ওষুধ অবশ্যই সঙ্গে রাখুন।
  • দ্বীপগুলোতে ঘোরার ফেরির টিকিটের ব্যবস্থা আগে থেকে করে রাখুন।
  • আবহাওয়া খারাপ থাকলে কোন পূর্ব ঘোষনা ছাড়াই জাহাজ চলাচল বন্ধ হতে পারে।
  • জাহাজের টিকিটের জন্য এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করুন।
  • জারোয়াদের ছবি তোলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ধরা পড়লে আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
  • পোর্ট ব্লেয়ার, হ্যাভলক এবং নীল আইল্যান্ডে এটিএম আছে।
  • আন্দামানের স্মারক কিনলে এর বিল সাথে রাখুন।
  • প্রাকৃতিক কোন জিনিস সাথে করে নিয়ে আসবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.