ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের রকেট হামলা, উদ্বিগ্ন হোয়াইট হাউজ

আন্তর্জাতিক

ইরাকে অবস্থিত দুটি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালিয়েছে ইরান।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতরের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

সিএনএন জানায়, মঙ্গলবার রাতে ইরাকের আইন-আল আসাদ সামরিক ঘাঁটিতে ১২টির বেশি রকেট হামলা চালিয়েছে ইরান। এই রকেট হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে হামলা করার কথা স্বীকার করেছে তেহরান।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মার্কিন ড্রোন হামলায় কুদসপ্রধান ও দেশটির শীর্ষ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।

ইরাকের আল-আসাদ নামের ওই বিমান ঘাঁটিটি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত একটি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

ওয়াশিংটন এ ঘটনার ওপর নজর রাখছে জানিয়ে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র স্টেফানি গ্রিশাম বলেছেন, ‌‘ইরাকে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাটিতে রকেট হামলা চালানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা সচেতন রয়েছি এবং গভীর পর্যবেক্ষণ করছি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ ঘটনা অবহিত করা হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা দল ও প্রতিরক্ষা দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন।’

এদিকে হামলার পর পর ইরনা নিউজ এজেন্সিতে ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড এক বিবৃতি দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ হামলা কুদসপ্রধান সোলেইমানির হত্যাকাণ্ডের বদলা। আমরা সতর্ক করে দিতে চাই যে, সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্রকে যারা তাদের ঘাঁটিগুলোকে ব্যবহার করতে দিয়েছে তাদেরকেই লক্ষ্যবস্তু করা হবে। বিশ্বের যেখান থেকেই ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হবে সেখানেই হামলা করা হবে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ইরানের পার্লামেন্টে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের বাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে।

কাতারভিত্তিক আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, মঙ্গলবার ইরানের পার্লামেন্টে একটি নতুন বিল আনা হয়। কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার সঙ্গে জড়িত মার্কিন সব বাহিনীকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে সেখানে। এছাড়া পেন্টাগনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পররাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা, অ্যাজেন্ট এবং কমান্ডার যারা সোলাইমানি হত্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন তাদের সবাইকেও ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেয়া হয়।

বিলে আরো বলা হয়, ‘সামরিক, গোয়েন্দা, অর্থনৈতিক, কারিগরি সহায়তার পাশাপাশি অন্যান্য সেবা বা লজিস্টিকস সহায়তা যারা মার্কিন বাহিনীগুলোকে দেবে তারাও সন্ত্রাসী কাজের সহযোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

এ সময় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সশস্ত্র বিদেশি শাখা কুদস ফোর্সকে ২০০ মিলিয়ন ইউরো প্রণোদনা দেয়ার পক্ষে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা।

প্রসঙ্গত ১৯৯৮ সালে কুদস ফোর্সের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন কাসেম সোলাইমানি। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর সিরিয়া, লেবানন ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ক্ষীণ হয় এবং ইরানের কর্তৃত্ব বাড়ে।

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার তাগিদে বেশ কিছু দিন ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল তেহরান। বাগদাদের মধ্যস্ততায় জেনারেল কাসেম সোলাইমানি এ আলোচনায় ইরানের পক্ষের দূত হিসেবে কাজ করছিলেন।

গত ৩ জানুয়ারি তিনি ইরাকে গেলে বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন হামলায় নিহত হন। হামলায় দায় স্বীকার করে ইশ্বর তার সঙ্গে রয়েছেন বলে বিবৃতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধংদেহী পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সূত্র: সিএনএন, সিবিএস নিউজ, ওয়াশিংটন পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.