পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় তৌহিদী জনতার বিক্ষোভ সমাবেশে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়ছার।
তিনি বলেন, আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। যখন তারা আমাদের রুমের জানালা ভেঙে ফেলে, তখন আমরা প্রথমে শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ি। এতে কাজ না হওয়ায় উপরের দিকে গুলি চালানো হয়।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ঈদগাহ মাঠে এ সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহতের বিষয়টি জানিয়ে বিকেলে এসব কথা বলেন তিনি।
পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়ছার বলেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের এক যুবকের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে। হ্যাকিংয়ের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আটক করেছি আমরা। এ নিয়ে গত রাতে স্থানীয় আলেমদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছে, আজকের প্রোগ্রাম হবে না। কিন্তু সকাল থেকে আমাদের কাছে খবর আসে, সেখানে মাইকিং হচ্ছে এবং স্টেজ বানানো হচ্ছে। সেখানে গিয়ে আমরা উপস্থিত মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি নিজে সেখানে বক্তব্য দিয়েছি। তারা সবাই আমার বক্তব্য শুনেছে।
এসপি বলেন, যখন আমি স্টেজ থেকে নেমে আসি, তখন একদল উত্তেজিত জনতা আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা আত্মরক্ষার্থে একটি রুমে গিয়ে আশ্রয় নিই। যখন তারা আমাদের রুমের জানালা ভেঙে ফেলে, তখন আমরা প্রথমে শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ি। এতে কাজ না হওয়ায় উপরের দিকে গুলি চালানো হয়। আমার জানামতে, একজন পুলিশ সদস্য বুকে গুলি লেগে গুরুতর আহত হয়েছেন। আমরা আহত অবস্থায় যাদের হাসপাতালে পাঠিয়েছি, তাদের মধ্যে চারজন মারা গেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ফেসবুকে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ায় তৌহিদী জনতার বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। এ সময় ১০ পুলিশসহ প্রায় দেড় শতাধিক আহত হন।
এ ঘটনায় নিহতরা হলেন- বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহফুজ (৪২), বোরহানউদ্দিন উপজেলার মহিউদ্দিন পাটোয়ারীর ছেলে মাহবুব (১৬), মনপুরা হাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান (৪৪) ও বোরহানউদ্দিনের মো. শাহিন।
আহতদের মধ্যে ৫০ জনকে বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে, ৪০ জনকে ভোলা সদর হাসপাতালে এবং ৩১ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ফেসবুকে আল্লাহ ও হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তি করার প্রতিবাদে বিপ্লব চন্দ্র শুভর বিচারের দাবিতে সকালে ঈদগাহ মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে তৌহিদী জনতা। রোববার বেলা ১১টার দিকে বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে সর্বস্তরের তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়।
বিক্ষোভ মিছিল না করার জন্য বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা জালাল উদ্দিন, বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা মিজানকে পুলিশ অনুরোধ জানায়। সাধারণ মানুষ আসার আগে বিক্ষোভটি বন্ধ ঘোষণা করতে বলা হয়। তাদের অনুরোধে এ দুই ইমাম সকাল সাড়ে ১০টার দিকেই যেসব লোক আসছে তাদের নিয়ে দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিলটি সমাপ্ত করেন।
কিন্তু ততক্ষণে বোরহানউদ্দিনের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক এসে ঈদগাহে জড়ো হয়। একপর্যায়ে তারা ওই দুই ইমামের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। সেখানে থাকা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ওই মসজিদের ইমামের রুমে আশ্রয় নেয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। নিজেদের বাঁচানোর জন্য উত্তেজিত মুসল্লিদের ওপর ফাঁকা গুলি ছুড়ে পুলিশ।
এতে সেখানে থাকা মুসল্লিরা আরও উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষ হয়। এতে চারজন নিহত ও দেড় শতাধিক আহত হন।