প্রযুক্তি বিশ্বে বেশ কিছুদিন ধরে নতুন আইফোন ঘিরে যেসব গুঞ্জন ছিল, তার ব্যতিক্রমী কিছু দেখাতে পারল না মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। ১০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় যুক্তরাষ্ট্রের কুপারটিনোর স্টিভ জব থিয়েটারে আইফোন ১১, ১১ প্রো ও ১১ প্রো ম্যাক্স উন্মোচন করেছে অ্যাপল। নতুন আইফোন ঘিরে আগে যে উন্মাদনা থাকত, এবার ততটা দেখা যায়নি। নতুনত্ব হিসেবে অ্যাপল এবার আইফোনের ক্যামেরাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। এ ছাড়া এ১৩ বায়োনিক চিপসেট এবং উন্নত গ্রাফিকসের কথা বলেছে। তবে গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে নতুন আইফোনের ক্ষেত্রে দাম বাড়ায়নি তারা। স্মার্টফোনের বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতায় অ্যাপলের নতুন আইফোন কতটা টক্কর দিতে পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
অ্যাপলের নতুন আইফোন ঘিরে ইতিমধ্যে কৌতুক শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, অ্যাপল নতুন ক্যামেরা উদ্বোধন করেছে। আইফোনে এবার ক্যামেরাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে অ্যাপল। পুরোনো আইফোনের মডেলের সঙ্গে নতুন আইফোনের পার্থক্য বের করা এতটাই কঠিন যে অ্যাপল তাদের অনুষ্ঠানে ক্যামেরা ফিচার নিয়েই বেশি কথা বলেছে। আগের তুলনায় নতুন আইফোনে প্রসেসিং ক্ষমতা ও ব্যাটারির আয়ু কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু এগুলো খুব বেশি প্রাধান্য পাওয়ার মতো কিছু নয়। অ্যাপলের কর্মকর্তারা নতুন ক্যামেরার এতটাই প্রশংসা করেছেন যে অন্য ফিচারগুলোকে ম্লান মনে হবে।
আইফোন ১১-তে ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স ও আল্ট্রাওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স–সংবলিত ডুয়েল রিয়ার ক্যামেরার সংযুক্তি রয়েছে। পেছনের এই দুটি ক্যামেরাই ১২ মেগাপিক্সেলের। অল্প আলোয় ছবি তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে আইফোন ১১-তে। কারণ, রাতের বেলা কিংবা কম আলোয় ছবি তোলার সময় এর নাইট মোড স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হবে।
কুইকটেক নামে আইফোন ১১-তে নতুন একটি ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। এই ফিচারের মাধ্যমে ছবি তোলার মাঝখানে কোনো বিরতি ছাড়াই ভিডিও শুরু করা সম্ভব হবে। ভালো সেলফি তোলার জন্য আইফোন ১১-তে রয়েছে ১২ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা। ফ্রন্ট ক্যামেরা ব্যবহার করে ৪-কে ৬০ এফপিএস ভিডিও ছাড়াও স্লো মোশন ভিডিও করা যাবে। এর রয়েছে এ১৩ বায়োনিক চিপ। অ্যাপলের দাবি, স্মার্টফোনে এযাবৎকালে সবচেয়ে দ্রুতগতির সিপিইউ ও জিপিইউয়ের এই এ১৩ চিপ। আইফোন এক্সআরের চেয়ে এক ঘণ্টা বেশি সময় আইফোন ১১-এর ব্যাটারি সচল থাকবে। আইফোন ১১ প্রো ও আইফোন ১১ প্রো ম্যাক্সে পেছনের তিনটি ক্যামেরার প্রতিটিই ১২ মেগাপিক্সেলের। এর একটি ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স, আরেকটি আল্ট্রাওয়াইড অ্যাঙ্গেল, অন্যটি টেলিফোটো ক্যামেরা।
প্রযুক্তি বিশ্বে ইতিমধ্যে স্মার্টফোনে ক্যামেরা–যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। চীনা স্মার্টফোন নির্মাতারা ক্যামেরায় চার ক্যামেরা সেটআপ পর্যন্ত রাখতে শুরু করেছে। বিশেষ করে স্মার্টফোনের ক্যামেরার ক্ষেত্রে স্মার্টফোন নির্মাতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশি। ক্যামেরায় কে কত অভিনবত্ব দেখাতে পারে বা কে কাকে ফিচারের দিক থেকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, তার প্রতিযোগিতা চলছে। বর্তমানে স্যামসাং ছাড়াও হুয়াওয়ে, অপো, ভিভো ও শাওমির মতো প্রতিষ্ঠান ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা বাজারে এনেছে। ক্যামেরা–যুদ্ধেও অ্যাপলকে টক্কর দিতে হবে।
গত জুন মাসেই অ্যাপলের নতুন আইফোনের তথ্য ফাঁস হয়। নতুন আইফোনের অধিকাংশ ফিচার দেখে বিশ্লেষকেরা বলেছিলেন, এবারের আইফোন হবে ‘একঘেয়ে’। মিজোহো সিকিউরিটিজের বিশ্লেষকেরা বলেন, নতুন আইফোনে অভিনব উদ্ভাবনী প্রযুক্তির স্বল্পতা থাকায় এটি গতানুগতিক আইফোনের মতোই হবে। নতুন আইফোন বাজারে আসার পর তাই নতুন কোনো চমক দেখাতে পারেনি অ্যাপল।
অ্যাপল ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের আইফোনের মতোই যন্ত্রাংশ থাকবে নতুন আইফোনে। বাড়তি হিসেবে ক্যামেরা আর নতুন এ সিরিজ চিপসেট বাদে সবকিছুই আগের মতো। ডিসপ্লেতে সামান্য পরিবর্তন ছাড়া আর কিছু তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।
অবশ্য অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক দাবি করেছেন, এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও উন্নত আইফোন হিসেবে বাজারে ছাড়া হচ্ছে আইফোন ১১।
অ্যাপলের দাবি সত্ত্বেও নতুন আইফোন বাজারে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে, তা গ্রাহক–সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করছে। অ্যাপলের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়, স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে গ্রাহক–সন্তুষ্টিতে অ্যাপল শীর্ষে রয়েছে। বাজার বিশ্লেষকেরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন, ক্রেতার মন জয় করতে না পারলে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো স্মার্টফোনের বাজারে ভুগতে হবে অ্যাপলকে। আইফোন বিক্রি টানা দ্বিতীয় বছরের মতো কমবে। স্মার্টফোন বাজারে বর্তমানে স্যামসাং ও হুয়াওয়ের পরের অবস্থানে রয়েছে অ্যাপল। তাদের ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা কয়েকটি ব্র্যান্ড। তবে অ্যাপল এবার ক্রেতা টানতে স্মার্টফোনের দাম কিছুটা কম রেখেছে। আইফোন ১১–এর দাম শুরু ৬৯৯ মার্কিন ডলার থেকে। ১১ প্রোর দাম ৯৯৯ মার্কিন ডলার। আইফোন ১১ প্রো ম্যাক্স পাওয়া যাবে ১ হাজার ৯৯ ডলারে। তথ্যসূত্র: সিনেট, জেডডিনেট, নিউইয়র্ক টাইমস।