![](https://dainikajkermeghna.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করার নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে।
মামলায় আপিল বিভাগে রায়ের রিভিউ আবেদনের সময় শেষ হয়েছে সোমবার (৩০ মার্চ )। কিন্তু এটিএম আজহার এখনও রিভিউ আবেদন দাখিল করেননি। তবে ১৪টি যুক্তিতে রিভিউ আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে বলে আসামিপক্ষের আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে। আদালত খুললেই তামাদি আইনের সুযোগ নিয়ে এ আবেদন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ থাকায় রিভিউ আবেদন করা যায়নি বলে জানিয়েছেন এটিএম আজহারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেন, রিভিউ আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। আদালত যেদিন খুলবে, সেদিনই রিভিউ আবেদন দাখিল করা হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, রিভিউ আবেদনের সময়সীমা ১৫ দিন। তবে এই ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন দাখিল করতে গিয়ে যদি দেখা যায় তা গ্রহণ করার মতো কেউ নেই, অর্থাৎ আদালত বন্ধ। তাহলে আদালত খোলার পর আবেদন দাখিল করার সুযোগ পাবেন।
এটিএম আজহারের আপিল করার ১৫ দিনের সময় শেষ হয়েছে ( ৩০ মার্চ) সোমবার। কিন্তু এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এটিএম আজহার রিভিউ আবেদন দাখিল করতে পারেননি। গত ২৫ মার্চ থেকেই সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় এবং করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৯ মার্চ থেকে সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের আদালতে সাধারণ ছুটি থাকায় রিভিউ আবেদন দাখিল করা যায়নি বলে জানান শিশির মনির।
তিনি বলেন, আপাতত আগামী ৪ এপ্রিলের আগে এ আবেদন দাখিল করারও সুযোগ নেই। কারণ এদিন পর্যন্ত ছুটি থাকবে। সাধারণ ছুটি না বাড়লে ৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট খুলবে। আর সেদিনই এই রিভিউ আবেদন দাখিল করা হবে।
শিশির মনির আরও বলেন, এক্ষেত্রে তামাদি আইন অনুসরণ করা হবে। তিনি বলেন, তামাদি আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের শেষ দিন যদি ছুটি বা বন্ধ থাকে, তবে আদালত খোলার প্রথম দিনটিকে শেষ দিন হিসেবে ধরে নিতে হবে।
তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী আসামি রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার দিন থেকে দিন গণনা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা আবেদন করলেও আজ পর্যন্ত প্রত্যায়িত অনুলিপি পাইনি। যদিও আমাদের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডকে একটি কপি দেয়া হয়েছে গত ১৬ মার্চ। সেইদিনটি ধরেই ৩০ মার্চ হচ্ছে রিভিউ আবেদন করার শেষ দিন। এরইমধ্যে গত ২১ মার্চ এটিএম আজহারুল ইসলাম আমাদের রিভিউ আবেদন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেভাবেই আমরা রিভিউ আবেদন প্রস্তুত করেছি।
এটিএম আজহারুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত বছর ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ রায় দেন। এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি ১৫ মার্চ প্রকাশিত হয়েছে। এ রায় প্রকাশের পর ওইদিনই এর কপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। রায়ের কপি বিকেল ৫টার পর পৌছায় সেদিন পরোয়ানা কারাগারে পাঠানো যায়নি। এরপর পরোয়ানা প্রস্তুত করে গত ১৬ মার্চ বিকেলে লাল কাপড়ে মুড়িয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পরোয়ানা পাঠানো হয় কাশিমপুর কারাগারে। সেখানেই বন্দি এটিএম আজহারুল ইসলাম। এরই মধ্যে তাকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় আইনজীবীরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই দিন তার আইনজীবীদের রিভিউ করার পরামর্শ দেন কারাবন্দি আজহার। এখন রিভিউ প্রস্তুত করেছেন আইনজীবীরা।
রিভিউ না করলে নিয়ম অনুযায়ী সরকার এটিএম আজহারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সব প্রস্তুতি নিতে পারবে। এটিএম আজহার যদি রিভিউ আবেদন করেন সেক্ষেত্রে ওই আবেদনের ওপর আপিল বিভাগে শুনানি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। যদি তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিভিউ আবেদন না করেন তবে সেক্ষেত্রে দণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করার সুযোগ পাবেন তিনি। তিনি যদি রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো আবেদন না করেন তবে সাজা কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করলে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের অপেক্ষা করতে হবে। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে কারা কর্তৃপক্ষ।
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এক রায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহার। এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত বছর ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যা গরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখেন। এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট আজহারকে গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি কারাবন্দি।