ডনাল্ড ট্রাম্প আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের নীতি বদলাবেন বলে যে অঙ্গীকার করেছিলেন, গুলিতে আহত হওয়ার পর এই রিপাবলিকান কি সেই অবস্থান ধরে রাখবেন?
বন্দুকধারীদের নির্বিচার গুলিতে নিরীহ নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনায় বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলছে আলোচনা। একপক্ষ যেমন এর পক্ষে, তেমনি বিপক্ষেও সরব অনেকে। পুরনো এ বির্তককে সামনে এনেছে নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় গুলিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আহত হওয়ার ঘটনা; যিনি বারবার নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে তার জোরালো অবস্থান জানিয়ে আসছেন।
পেনসিলভানিয়ার বাটলারে শনিবার রাতে নির্বাচনি সভার মঞ্চে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। গুলি তার ডান কান ছুঁয়ে যায় এবং তিনি মঞ্চে বসে পড়েন।
এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেন, “এ ধরনের সহিংসতার কোনো জায়গা এই আমেরিকায় হবে না।”
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, বাইডেন প্রশাসনের সবশেষ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নীতি অনুযায়ী, বর্তমানে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করার সময় ক্রেতার অপরাধের ইতিহাস আছে কি না এবং তিনি মানসিকভাবে সুস্থ কি না, বিক্রেতাদের সেটি নিশ্চিত হওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। বন্দুকধারীদের গুলিতে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ত্র অধিকারকর্মীদের সংগঠন ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন (এনআরএ) এর এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমার অফিসে ফেরার প্রথম সপ্তাহে, সম্ভবত প্রথম দিনই অস্ত্র মালিক ও প্রস্তুতকারকদের ওপর বাইডেনের প্রতিটি ‘আক্রমণ’ বন্ধ করা হবে।”
শনিবার রাতের হামলার পর ট্রাম্প অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে অবস্থান বদলাবেন কি না, সেই প্রশ্ন যেমন সামনে আসছে; তেমনই এই ঘটনা আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অপরাধবিজ্ঞান, আইন ও জননীতি বিভাগের অধ্যাপক জেমস অ্যালান ফক্স বলেন, এ ঘটনার পর ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণায় ‘অস্ত্র সহিংসতা’ একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
ট্রাম্পের ওপর হামলাকারীর গুলিতে সমাবেশে আসা এক রিপাবলিকান সমর্থকের প্রাণ গেছে, গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুজন। পরে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার গুলিতে ওই পুরুষ আততায়ী নিহত হয়েছে বলে সিক্রেট সার্ভিসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
অধ্যাপক ফক্স নর্থইস্টার্ন গ্লোবাল নিউজকে বলেন, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের যৌক্তিক পদক্ষেপকে সমর্থন করতে চায় না রিপাবলিকান পার্টি। “তাদের দলের নেতাকে (ট্রাম্প) গুলি করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হননি। তবে এ ঘটনা অস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রশ্নে তাদের কিছু অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে অবশ্যই সহায়তা করবে।”
নর্থইর্স্টান ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান কোসটাস পানাগোপোলাস বলেন, রাজনৈতিকভাবে গুলির এ ঘটনা ট্রাম্পের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ অনেকেই মনে করেন যে, ট্রাম্পই ভোটে সুবিধা নিতে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং বিভাজনের রাজনীতিকে উস্কে দিয়েছেন।
নির্বাচনি প্রচার, রাজনৈতিক মতাদর্শ ও আচরণবিধি বিষয়ক এই বিশেষজ্ঞ অবশ্য পাল্টাটাও ঘটতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেন।
তার মতে, গুলির ঘটনা ট্রাম্পের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের সহানুভূতিও তৈরি করতে পারে, কারণ তিনি স্পষ্টতই রাজনৈতিক সহিংসতা এবং চরমপন্থার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে সোচ্চার সবসময়
গুলির ঘটনার পর হামলাকারীর বিষয়ে রোববার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা-এফবিআই বলেছে, ট্রাম্পের ওপর হামলাটি করেন ২০ বছর বয়সি টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস। সিক্রেট সার্ভিসের গুলিতে নিহত এ তরুণ ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টিরই সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত।
হামলাকারীর দলীয় পরিচয় এ বিষয়ক আলোচনায় বাড়তি রসদ জুগিয়েছে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হলে কী করবেন তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা স্মল আর্মস সার্ভের (এসএএস) হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০০ জন নাগরিকের বিপরীতে ১২০টি করে আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানা রয়েছে।
বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ, যেখানে জনসংখ্যার চেয়ে আগ্নেয়াস্ত্র বা বন্দুকের সংখ্যা বেশি। পরিসংখ্যানে এর পরের অবস্থানে থাকা অঞ্চলটি হচ্ছে ফকল্যান্ড আইল্যান্ড, যেখানে প্রতি ১০০ জনের বিপরীতে আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা ৬২ দশমিক ১০। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক।
২০২০ সালের একটি গ্যালাপ-জরিপের বরাতে সিএনএন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে যারা পরিবার নিয়ে থাকেন তাদের ৪৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কের ঘরে অন্তত একটি বন্দুক রাখেন এবং তাদের এক-তৃতীয়াংশের নিজস্ব মালিকানায় বন্দুক বা আগ্নেয়াস্ত্র আছে।
ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস-অস্টিনের সহযোগী অধ্যাপক জাচ্যারি এলকিনস বলেন, বিশ্বে মাত্র তিনটি দেশে সাংবিধানিকভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার বৈধতা রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও গুয়েতেমালা। এরমধ্যে অন্য দুই দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় এক-দশমাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক সহিংসতায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দাবি জোরাল হলেও ট্রাম্প সবসময়ই তার বিরোধিতা করে এসেছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমার ৪ বছরের আমলে কিছুই ঘটেনি। অস্ত্র (নিয়ন্ত্রণ) নিয়ে কিছু একটা করতে আমার ওপর প্রচণ্ড চাপ ছিল। কিন্তু কিছুই করিনি। আমরা হাল ছাড়িনি।”
নিজেকে অস্ত্র মালিকদের ‘সেরা বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।
এর আগে ২০২২ সালে হিউস্টনে রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছিলেন, “আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনুপস্থিতিতে কখনও সংকট দেখা দিলে এনআরএ এর প্রশিক্ষিত সদস্যের চেয়ে আপনার আশপাশে আর কেউ থাকে না।”
গুলির ঘটনার পর হামলাকারীর বিষয়ে রোববার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা-এফবিআই বলেছে, ট্রাম্পের ওপর হামলাটি করেন ২০ বছর বয়সি টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস। সিক্রেট সার্ভিসের গুলিতে নিহত এ তরুণ ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টিরই সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত।
অতীত অভিজ্ঞতা যা বলছে
অধ্যাপক অ্যালান ফক্স বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এপি, ইউএস টুডে পত্রিকা ও নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ‘মাস কিলিংস ডেটাবেস’ অর্থাৎ বন্দুক হামলায় গণহারে হত্যার তথ্যভাণ্ডার এর প্রধান তত্ত্ববধায়ক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করছেন।
তিনি বলছেন, ১৯৮১ সালের ৩০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান নেতা রোনাল্ড রিগানকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার পর তার জনপ্রিয়তা বেড়েছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র আইন কঠোর করার পক্ষে জনসমর্থন বেড়েছিল।
ঘরের নিরাপত্তা, ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য অস্ত্র রাখার পক্ষে প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি রয়েছে রিপাবলিকান পার্টির। এরপরও নিজে বন্দুক হামলার শিকার হওয়ার পর রিগানও তখন ব্যক্তির কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার আইনে কড়াকড়ি আরোপে সম্মত হয়েছিলেন।
২০০৮ সালের ৮ জানুয়ারি অ্যারিজোনা রাজ্যের প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা গ্যাবি জিফোর্ডসকে গুলির ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র আইন সংশোধন করার পক্ষে জোর দাবি উঠেছিল। জিফোর্ডস নিজেও একজন ‘অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ অধিকারকর্মী’ ছিলেন।
বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রণমূলক কিছু পদক্ষেপ নিলেও আইন করে নাগরিকের কাছে অস্ত্র রাখার বিধান বাতিল করতে ব্যর্থ হন।
স্কুলে স্কুলে বন্দুক হামলায় শিশুদের গণহারে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেকবার কাঁদতে দেখা গেছে ওবামাকে। ওই অবস্থায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ওয়াদাও করতে দেখা গেছে তাকে। তবে রিপবালিকানদের বিরোধিতায় আইন পাস করাতে পারেননি তিনি। ট্রাম্প সেই রিপাবলিকানদেরই কট্টর অংশের নেতা।
অবশ্য অধ্যাপক ফক্স বলছেন, “রিগান ও জিফোর্ডসকে হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর যেভাবে অস্ত্র সহিংসতার বিষয়টি সামনে চলে এসেছিল, ট্রাম্পের ঘটনার বেলাতেও তেমনি সেটি আলোচনার শীর্ষে উঠে আসবে।”
ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বন্দুক হামলার শিকার হওয়া শেষ প্রেসিডেন্ট রিগান। ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট, তবে আবার তিনি ভোটে লড়ছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে তার ক্ষমতায় যাওয়ার আভাসও রয়েছে বিভিন্ন জরিপে।
অস্ত্র নিয়ে ট্রাম্পের মতাদর্শ
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম একটি হল-অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে বাইডেন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তা বাতিল করা। এখন নিজেই স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের হামলার শিকার হওয়ার পর তার সেই অবস্থান বদলায় কি না, তা নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে।
বন্দুক হামলার বিষয়ে ট্রাম্পের নিজস্ব মতাদর্শ রয়েছে, যেখানে হামলার জন্য বন্দুক নয়; ব্যক্তির মানসিকতাকেই তিনি দায়ী করে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে। নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যান্য প্রেসিডেন্টের তুলনায় সবচেয়ে বড় বন্দুকপন্থি হিসেবেও দাবি করেন তিনি।
২০২৩ সালের এপ্রিলে ইন্ডিয়ানা রাজ্যের ইন্ডিয়ানাপোলিসে এনআরএ এর এক অনুষ্ঠানে বন্দুক রাখার পক্ষের হাজার হাজার সমর্থনকারীর উদ্দেশে ট্রাম্প দম্ভের সঙ্গে বলেন, “হোয়াইট হাউসে আপনারা এ যাবৎকাল যাদের দেখেছেন, তাদের মধ্যে আমিই অস্ত্রের সবচেয়ে বড় সমঝদার এবং সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর পক্ষে অবস্থানকারী।”
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রয়োজন অনুযায়ী অস্ত্র রাখার অধিকার পায় মার্কিনিরা।
ওই অনুষ্ঠানে অস্ত্র অধিকারকর্মীদের কাছে ভোট প্রার্থনা করে ট্রাম্প বলেন, “২০২৪ সালে আপনাদের সমর্থন পেলে আমি হব আপনাদের সবচেয়ে ভালো অনুগত এবং আবার একবার নির্ভিক বিজয়ী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হব।”
অস্ত্র অধিকারের পক্ষে লড়ে যাওয়া ট্রাম্প এখন কী করবেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও অবস্থান না বদলানোরই সম্ভাবনা বেশি বলে অনেকে মনে করছেন।
ইন্ডিয়ানাপোলিসের ওই অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছিলেন, বছরের পর বছর ডেমোক্র্যাটরা স্কুলে হামলা ঠেকাতে অস্ত্র আইন কঠোর করার পক্ষে তাদের চরমপন্থি চিন্তাভাবনা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা আদৌ কোনো কাজে আসেনি।
“এসব হামলার জন্য আসলে বন্দুক কোনো সমস্যা নয়। এটি মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা, এটি সাংস্কৃতিক সমস্যা এবং এটি আধ্যাত্মিক সমস্যা।”
বিবিসি বলছে, ট্রাম্পের এবারের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নাগরিকদের কাছে অস্ত্র রাখার পক্ষে আইনে যা যা প্রতিবন্ধতা, সবই তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির জন এফ কেনেডি আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। ওই সময় দেশটিতে অস্ত্র আইন কঠোর করার পক্ষে নাগরিকদের মনোভাব থাকলেও হ্যান্ডগান রাখার বিষয়ে সমর্থন ছিল বেশি।
১৯৫৯ সাল থেকে অস্ত্র আইন নিয়ে জনমত যাচাই করে আসছে জরিপ সংস্থা গ্যালাপ। তাদের এক জরিপ বলছে, ১৯৬৩ সালের শেষ দিকে দেশটিতে হ্যান্ডগান রাখার পক্ষে প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষের সমর্থন ছিল।
তবে অস্ত্র রাখার অধিকার নিয়ে সোচ্চার হলেও অস্ত্র কার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে, তারা সেটি ব্যবহারের যোগ্য মানুষ কি না, সে বিষয়ে আইনে কড়া বিধিবিধান যুক্ত করার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে জনসমর্থন বেড়েছে।
২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর প্রকাশিত গ্যালাপের জরিপ বলছে, দেশটির ৬৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ চায় অস্ত্র আইন কঠোর করা হোক।
অধ্যাপক প্যানাগোপোলাস বলছেন, “যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতা দিয়ে আমরা আমাদের রাজনৈতিক সমস্যার সমধান করতে পারব না। ভোটকেন্দ্রে গিয়েই এর সমাধান আনতে পারি আমরা।”
হামলার শিকার হওয়ার পরের সকালেই রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন। নির্বাচনি প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। নিজের ‘টুথ সোশ্যাল’ এ এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “আমরা ভীত নই, বরং নষ্টামির বিরুদ্ধে আমাদের বিশ্বাস ও দৃঢ়তায় অবিচল থাকব আমরা।”
ট্রাম্প ও তার প্রচারশিবির হামলার ঘটনাটিকে সহিংসতা বা প্রতিপক্ষের করা ন্যাক্কারজনক কাজ বলে বর্ণনা করলেও এখনও তারা এটিকে কোনোভাবে আগ্নেয়াস্ত্রজনিত সমস্যা বলেনি। উপরন্তু হামলার পরপরই জনসভার মঞ্চে উঠে দাঁড়িয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাতে হুংকার দিয়ে তাকে বলতে শোনা যায়, “ফাইট, ফাইট, ফাইট”। অর্থাৎ লড়াইয়ের ডাক দিচ্ছেন তিনি। এই লড়াইয়ের লক্ষ্য তার প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাট পার্টিই হওয়ার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভাজিত সমাজের কথা ট্রাম্পও স্বীকার করেন। ট্রুথ স্যোশালে আরেক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “এ মুহূর্তে সবকিছুর চেয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং আমেরিকানদের শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকার সত্যিকারের বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোটাই বেশি জরুরি। অশুভকে জয়ী হতে দেবেন না।
“আমি সত্যিই আমার দেশকে ভালোবাসি, আপনাদের সবাইকে ভালোবাসি। আমি উইসকনসিনে এ সপ্তাহে আমাদের মহান এ জাতির সামনে বক্তব্য রাখার অপেক্ষায় আছি।”
একই পোস্টে সাবেক প্রেসিডেন্ট লেখেন, “একমাত্র ঈশ্বরই অভাবনীয় কোনও কিছু ঘটা থেকে রক্ষা করেছেন।”অবশ্য অস্ত্র সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে নর্থইস্টার্ন গ্লোবাল নিউজকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক অধ্যাপক প্যানাগোপোলাস বলছেন, “রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান আমাদের দেশে নেই। একই সঙ্গে বিভেদ ও মতাদর্শিক দিক থেকে দেশটা কতটা বিভাজিত, তাও এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে।”