দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৭ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। ফলে ভাইরাসটিতে মোট ৭০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৯১১ জন। যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫২ হাজার ৪৪৫ জনে।
মঙ্গলবার (২ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন।
তিনি ৫২টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ হাজার ৯০৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১২ হাজার ৭০৪টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো তিন লাখ ৩৩ হাজার ৭৩টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরও দুই হাজার ৯১১ জনের দেহে। ফলে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ হাজার ৪৪৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ৩৭ জনের। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭০৯ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৫২৩ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১১ হাজার ১২০ জনে।
নতুন করে যারা মারা গেছেন, তাদের ৩৩ জন পুরুষ এবং চারজন নারী। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২৮ জন এবং বাসায় মৃত্যু হয়েছে নয়জনের। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৫ জন, সিলেট বিভাগের চারজন, বরিশাল বিভাগের তিনজন, রাজশাহী বিভাগের দুজন, রংপুরের দুজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের একজন রয়েছেন। বয়সের দিক থেকে ২১ থেকে ৩০ বছরের একজন, ত্রিশোর্ধ্ব চারজন, চল্লিশোর্ধ্ব একজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১০ জন, ষাটোর্ধ্ব নয়জন, সত্তরোর্ধ্ব ১০ জন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের দুজন মারা গেছেন।
গত সোমবারের (১ জুন) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ২২ জন মারা গেছেন। ১১ হাজার ৪৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরও দুই হাজার ৩৮১ জনের দেহে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ও শনাক্ত- উভয় সংখ্যা তো বেড়েছেই, হয়েছে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ডও। এর আগে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ছিল দুই হাজার ৫৪৫ জনের। যা জানানো হয় ৩১ মে’র বুলেটিনে। মৃত্যুর দিক থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণহানি। এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড আছে ৪০ জনের। সেটিও জানানো হয় ৩১ মে’র বুলেটিনে।
মঙ্গলবারের বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনার সুস্থতার হার ২১ শতাংশ এবং মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৩৮৮ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ৬ হাজার ২৪০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১৬৯ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ হাজার ৪০৭ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ৫০৬ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার ৩৮৫ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৭ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ৩১হাজার ৮৪০ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫৮হাজার ৫৪৫জন।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
ডা. নাসিমা বরাবরের মতোই করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা, বাইরে বেরোলে হ্যান্ড গ্লোভস পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে গোটা বিশ্ব এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। চীনের উহান শহর থেকে গত ডিসেম্বরে ছড়ানোর পর এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬৪ লাখ। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার। তবে সোয়া ২৯ লাখের মতো রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ।