কীভাবে যাবেন ?
# কী দেখবেন ?
জম্মু : ৩০৫ মিঃ (৯৯০ ফিট) উচ্চতায় তাওয়াই নদীর তীরে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের শীতকালীন রাজধানী শহর। একে মন্দিরের শহরও বলা হয়ে থাকে। পর্যটকদের কাশ্মীর উপত্যকায় পৌঁছানোর তোরণদ্বার। সমতল আর কাশ্মীর উপত্যকার মাঝে জম্মু তাওয়াই এই পথের শেষ রেলস্টেশন। জম্মুর অন্যতম আকর্ষন রঘুনাজীর মন্দির এর অবস্থান এই শহরের কেন্দ্রে। আরো দেখতে পাবেন জয়পুর পাথরের তৈরী রাম, লক্ষণ, সীতা সহ অনেকের মুর্তি। অমর সিং প্যালেস মিউজিয়ামে অনেক ঐতিহাসিক ছবি এবং তার ব্যক্তিগত বই সংগ্রহ দেখে মুগ্ধ হবেন। > শ্রীনগর : পরদিন সকালে বেরিয়ে পড়ুন সারা দিন সময় হাতে নিয়ে। প্রথমেই ঘুরে নিতে পারেন ডাল লেক। রাজকীয় ডিঙি নৌকা, যাকে স্থানীয় ভাষায় বলে ‘শিকারা’, তাতে চড়ে চক্কর দিতে পারেন ডাল লেকের অলিগলি, দেখে নিতে পারেন নেহরু পার্ক, ভাসমান পোস্ট অফিস, চাঁদনি চক আর বাজার, যেখানে রকমারি পসরা সাজিয়ে বসেছে স্থানীয় অধিবাসীরা। শ্রীনগরে দেখার মতো আরও আছে ইন্দিরা গান্ধী টিউলিপ গার্ডেন, চশমা শাহি, নিশাত গার্ডেন আর শালিমারবাগের মতো বড় বাগান, যেখানে শানবাঁধানো পাহাড়ি ঝরনা থেকে পড়ছে অবিরাম জলধারা আর বাগান রাঙিয়ে আছে হাজারো ফুলের গাছ। এখানে আরও আছে পরিমহল, মানসবাল লেক, নাগিন লেক, ঐতিহাসিক চারার-ই-শরিফ ও হজরতবাল মসজিদ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঝিলম নদী এবং শ্রী প্রতাপ সিং মিউজিয়াম।
গুলমার্গ : একদিন সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন গুলমার্গের উদ্দেশে। বাসে দুই ঘণ্টার যাত্রা রিজার্ভ জীপেও যেতে পারেন। বরফাচ্ছাদিত পর্বতে কেবল কারে চড়ে দেখে নিতে পারেন পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীর সীমান্ত। ঘোড়ায় চড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন চেরি অরচার্ড, পাইন ফরেস্ট কিংবা মিশন কাশ্মীর সিনেমার শুটিং স্পট। এ ছাড়া এখানে রয়েছে আরও অনেক রকম বিনোদনের ব্যবস্থা।
প্যাহেলগাম : শ্রীনগর থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে নদী-উপত্যকাশোভিত প্যাহেলগাম, নয়নাবিরাম সৌন্দর্যের লীলাভুমি হচ্ছে এই প্যাহেলগাম। চোখ বুঝতে মন চাইবে না এর সৌন্দর্যে। এখানে রয়েছে দেখার মতো অনেকগুলো স্পট। রিজার্ভ গাড়ী নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বেতাব ভ্যালী, চন্দনবাড়ী, আরু ভ্যালী সহ আরো অনেক স্পট। এছাড়াও ঘোরা নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন মিনি সুইজারল্যান্ড ও সুটিং স্পট।
সোনমার্গ : সিন্ধু উপত্যকায় সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোনমার্গ। কাশ্মীরে বেড়ানোর সবচেয়ে সুন্দর জায়গার নাম সোনমার্গ। সোনমার্গ উজ্জ্বল ফুল এবং ঘন সবুজ পাহাড় দিয়ে পূর্ণ। সোনমার্গ এর নামের মানে ‘সোনার তৃণভূমি’ এবং যা যজি লা পাসের কাছাকাছি। রাকৃতিক সৌন্দর্য এই অত্যাশ্চর্য এলাকায় হিমবাহ এবং দেশের সর্বোচ্চ হ্রদ-Vishansar লেক, সমুদ্রতল উপরে ৪০৪৮ মিটার এবং স্ট্রিম মহান আলপাইন হ্রদ, নদীপ্রবাহ যা সারা বিশ্ব থেকে আগত প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি জনপ্রিয় পর্যটন অরন্য। তৃণময় শান্তিপূর্ণ এবং আদিম সৌন্দর্য দেখে এবং লম্বা গাছের মাধ্যমে ট্রেকিং শুধু সোনমার্গ পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় কার্যক্রম সমূহের মধ্যে একটি।
লাদাখ : লাদাখ। শব্দটি কানে আসলেই চিরসুন্দর প্রকৃতি থেকে শুরু করে চিরসুখী মানুষদেরও কল্পনা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অবশ্য এই রূপকল্পটা যে খুব একটা অতিরঞ্জিত, তা কিন্তু নয়। মুঘল সম্রাট শাহজাহান বলেছিলেন, পৃথিবীতে যদি স্বর্গ বলে কোনো স্থান থাকে তবে সেটি কাশ্মীর। কিন্তু শাহজাহান যদি একবারও লাদাখ ঘুরে আসতে পারতেন তাহলে নিশ্চিত তার স্বর্গের ঠিকানা পাল্টে যেত। প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক পর্যটক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাদাখে আসেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিন্তু লাদাখে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বাইরেও প্রকৃতির যে রহস্যময়তা আছে তা অনেক বেশি আকর্ষণীয় মানুষের জন্য। লাদাখের লেহ অঞ্চল থেকে কারগিলের দিকে যেতে ত্রিশ কিলোমিটার দূরত্বেই আছে সে রহস্যময় চুম্বক পাহাড়। শ্রীনগর-লেহ মূলসড়ক দিয়ে খুব সহজেই ওই পাহাড়টি দেখা যায় এবং সড়কটিও ওই পাহাড়ের ওপর দিয়েই গেছে। ওই সড়কে গেলেই সাক্ষী হওয়া যাবে এক রহস্যময় ঘটনার। যদি আপনার গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে রাখেন, তাহলে কিছুক্ষণ পরেই দেখতে পাবেন সাধের গাড়িটি ক্রমশ সামনের দিকে যাচ্ছে। ঘণ্টায় বিশ কিলোমিটার গতিতে গাড়িটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে যেন অদৃশ্য কেউ।
শুধু গাড়িই নয়, লাদাখের এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে কোনো বিমান যাওয়ার সময় খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বিমানের গতিপথ যাতে পাল্টে না যায় সেদিকে তীক্ষè নজর রাখতে হয় পাইলটকে। আর সড়কপথে পর্যটকরা চাইলে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে অনায়াসে বিশ কিলোমিটার গতিবেগে পুরো পরিবেশটিই অবলোকন করতে পারেন। এই চুম্বক পাহাড় নিয়ে স্থানীয়দের ভেতর নানা গল্প চালু আছে। সবগুলো গল্প সে ঐশ্বরিক বা অতিপ্রাকৃত শক্তির বর্ণনায় শেষ হয়। অবশ্য পৃথিবীতে যতগুলো এ রকম স্থান আছে তার সবগুলোর স্থানীয় জনতার বিশ্বাসও মূলত ওই অতিপ্রাকৃত শক্তি কেন্দ্রিক। লাদাখের এই চুম্বক পাহাড় স্থানীয় জনতার বাইরে ভিন্নাঞ্চলের মানুষের কাছে আবিষ্কৃত হয় অনেক পরে। তৎকালীন সময়ে কাশ্মীর কর্তৃপক্ষ ওই চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সম্পর্কে সাধারণকে জানানোর কোনো প্রয়োজন মনে করেনি। কিন্তু বেশকিছু মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটনার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায় রাতারাতি। এছাড়াও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কারগিল যুদ্ধ হওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলের সার্বিক চিত্রই অনেকটা পাল্টে যায়। বর্তমানে লাদাখ কর্তৃপক্ষ ওই সড়কটির দুই প্রান্তেই সাইনবোর্ড বসিয়ে দিয়েছে, যাতে কেউ দুর্ঘটনায় পতিত না হয়। তবে চুম্বক পাহাড়ের ওই অঞ্চলের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের কার্যকারণ যে শুধু লোহার বস্তু কেন্দ্রিকই দৃশ্যমান, তা নয়। রাস্তার ধারে বা কিছুটা উঁচু স্থানে দাঁড়ালে তীক্ষè এক শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন এই শব্দকে ঐশ্বরিক বলে ধারণা করা হলেও পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে এ ধরনের গ্রাভিটি হিল রয়েছে সেখানে চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের তরঙ্গে ঘর্ষণের ফলে ওই শব্দ উৎপাদিত হয়। এছাড়াও এমনও অনেক সময় দেখা যায়, লাদাখের ওই চুম্বক পাহাড়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর পানিও গ্রাভিটির সূত্র ধরে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হওয়ার চেষ্টা করে।
কাটরা : ২০-৩০ রুপীতে ২ ঘন্টায় জম্মু থেকে ৪৮ কিঃমিঃ বাস জার্ণীকরে কাটরা পৌঁছতে হবে। সকাল ৬ টা থেক রাত ৮ টা পর্য্যন্ত কিছুক্ষণ পরপর বাস যাচ্ছে। ট্যাক্সি জীপ করেও যেতে পারেন-তবে পাহাড়ী পথবলে খরচ বেশী পড়বে। ১৪ কিঃমিঃ হাটাপথে পৌঁছতে হয় উত্তর ভারতের প্রসিদ্ধ বজ্ঞোদেবীর তীর্থ মন্দিরে। ১৬০০মিটার (৫২০০ ফিট) উচ্চতায় পাহাড়ী মন্দির এটি। এখানে থাকা এবং খাবার জন্য শ্রীধর সভা, বৈষ্ণ সেবা সংঘ এবং ধর্ম্নাথ ট্রাস্টে সুবন্দবস্ত আছে।
কৈলাস কুন্ড : কৈলাশকুন্ডের অন্য নাম কপলাশ লেক। ভাদরোয়া শহর থেকে প্রায় ১৮ কিঃমিঃ দূরে ৪৪০০ মিটার(১৪৩০০ ফিট) উচ্চতায় স্বচ্ছ নীল জলের সরোবর কৈলাশ কুন্ড। এখানে আরো আছে-মহেশ্বর বিষ্ণু, মহাদেব ত্রিশুল ও বাসুকী নাগের মুর্তি এবং মন্দির। থাকার জন্য আছে ২০০/৩০০ রুপীতে পর্যাপ্ত ট্যুরিস্ট বাংলোর সুবিধা।
আর সব ঝামেলা এড়াতে আমাদের পাচকেজটি নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ভুস্বর্গ কাশ্মীর।