হারবেস্টার: সোনালী দিনে দাউদকান্দির কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক।

দাউদকান্দি উপজেলা

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে দেশের কৃষি খাত। খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশ। করোনাকালীন সংকটেও কৃষি খাতের অগ্রগতির জ্বলন্ত প্রতিফলন দেখা গেছে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। সরকারি ভর্তুকি এবং দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর মোহাম্মদ আলী (অব.) এর নিজস্ব অর্থায়নে কেনা আধুনিক কম্বাইন হারবেস্টার মেশিনে চলতি বোরো মৌসুমের সোনালী ধান দ্রুত ঘরে তুলে অনেকটাই নির্ভার কুমিল্লার দাউদকান্দির কৃষকরা। বুধবার (২০ মে ২০২০) সন্ধ্যা থেকে রাতভর চলা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে ক্ষতিক্ষস্ত দেশের উপকূল অঞ্চল। তার আগেই মাত্র কয়েকদিনে এই হারবেস্টার মেশিনে দাউদকান্দির ৯.৬ হেক্টর (২৩৮৭ শতক) জমির পাকা ধান নিরাপদে ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। এই মেশিনে প্রতি ঘণ্টায় এক একর জমির ধান কাটা, মাড়াই; একইসঙ্গে পরিষ্কার ও বস্তাবন্দি করা যায়। এত সহজ পদ্ধতি ও দ্রুততার সঙ্গে ধান ঘরে তোলার কথা স্বপ্নেও ভাবেননি স্থানীয় কৃষকরা। দাউদকান্দির চাষিদের জন্য এ যেন সোনালী ধানে সোনালী দিন। ধান ঘরে তোলার এই সোনালী দিনকে আরও উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগ। কারণ হারবেস্টারে ধান কেটে দিচ্ছেন উপজেলার ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম নয়নের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এরফলে দিন বদল হচ্ছে কৃষকদের। নতুন করে ধান চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে স্থানীয়দের মাঝে। যাতে গতি সঞ্চার হবে দেশের কৃষি অর্থনীতির। করোনাকালে খাদ্য সংকট থেকেও রক্ষা পাবে স্থানীয়রা।

এলাকার দরিদ্র কৃষকরা হারবেস্টারে ধান কাটতে পেরে ব্যাপক খুশি। বেঁচে গেছে টাকা, কেটে গেছে দুশ্চিন্তা।
জিংলাতলী ইউনিয়নের বাহাদুখোলার গ্রামের বাসিন্দা কিষানি সুরাইয়া খাতুন জানান, খাবারের জন্য ১২ শতক জমিতে ধান করেছিলাম। হাতে টাকা নাই, করোনার জন্য ঘর থেকে বাইর হওয়াও দায়। তাই পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে যাই। এই সময় উপজেলা চেয়ারম্যান গরীবের ধান কাটতে মেশিন পাঠান। আমি বিনা খরচে নিরাপদে ধান ঘরে উঠাইছি। খুব উপকার হয়েছে আমার।
উত্তর গাজীপুর গ্রামের কৃষক মোশাররফ হোসেন বলেন, কত নেতাই দেখেছি। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যানের মত কৃষকের পাশে কেউ দাঁড়ায় নাই। সহজে পাকা ধান বাড়ি নিয়েছি। দোয়া করি তার জন্য এবং ছাত্রলীগের ভাইদের জন্য।

উল্লেখ্য যে, চলমান করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে যানবাহন বন্ধ থাকায় শ্রমিকেরা আসতে পারছিলেন না। পাশাপাশি মানুষের জীবন বাঁচাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। এ অবস্থায় খেতের পাকা ধান কাটা নিয়ে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে কৃষকদের। এ সময় কৃষকদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর মোহাম্মদ আলী (অব.)। গত (০৩ মে,২০২০) দাউদকান্দি উপজেলার দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে না পারা চাষিদের জন্য একটি অত্যাধুনিক ধান কাটার মেশিন YANMARAG-600A (কম্বাইন্ড হারভেস্টার) সরকারি ভর্তুকি ও নিজস্ব অর্থায়নের সমন্বয়ে কিনে দেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল ইসলান ও কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার জামান, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তারিকুল ইসলাম নয়ন ও সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদের হাতে ওইদিন অত্যাধুনিক এই মেশিনটির চাবি তুলে দেন মোহাম্মদ আলী।

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানে দেশের এই করোনাকালিন ও পরবর্তী খাদ্য সংকট মোকাবেলায় কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আর এই মুহূর্তে দেশের শ্রমিক স্বল্পতার কারণে, সোনালী ধান ঘরে তোলতে বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে কৃষকদের। তাই দাউদকান্দির কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া কৃষিখাতে ভর্তুকির মাধ্যমে এ কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন উপজেলার কৃষকদের কল্যাণে আনা হয়।

এর কিছুদিন আগে থেকে, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে, কুমিল্লা-১ আসনের সাংসদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া এবং দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নির্দেশে উপজেলা ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিনা পারিশ্রমিকে পাকা ধান কেটে কৃষকের ঘরে তুলে দেন।বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেক ধানি জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায়, দ্রুত সময় কৃষকের পাকা ধান ঘরে তোলার জন্য কম্বাইন্ড হারভেস্টার উপহার হিসেবে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *